অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ফেনীর আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল হাজারী। গত ২৮ অক্টোবর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার হাতে চিঠি তুলে দেন। রাজনীতি ছেড়েই দিয়েছিলেন হাজারী। কিন্তু আবার কেন ফিরে আসলেন? আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এখন তার প্রয়োজনীয়তা কী?
জানতে চাইলে জয়নাল হাজারী জার্মান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার এখন আওয়ামী রাজনীতিতে কিছু দেয়ার নেই। কোনো কর্মসূচি নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। শুধুমাত্র নেত্রী (শেখ হাসিনা) যে আদেশ দেবেন সেটা পালন করব। এর বাইরে কিছু করার নেই।’
জয়নাল হাজারী ১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনী-২ (সদর) আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালের ১৭ আগস্ট তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হাজারী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পাঁচটি মামলায় ৬০ বছরের সাজা হয় তার।
ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করলে আট সপ্তাহের জামিন পান হাজারী। পরে ১৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। চার মাস কারাভোগের পরে ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন। কিন্তু এরপর আর তিনি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হননি।
এখন আর ফেনীতে যাবেন না বলে নিজেই জানিয়েছেন হাজারী। ঢাকাতেই থাকেন। তারপরও কেন আবার উপদেষ্টার পদ নিলেন? এর জবাবে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘আমি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হওয়ার জন্য কারোর কাছে বলিনি বা ইচ্ছাও প্রকাশ করিনি। নেত্রী বলেছিলেন এখন চুপচাপ থাকো। এতদিন চুপচাপ ছিলাম। নেত্রী বলেছেন এখন আবার আসেন। আবার এসে গেলাম।’
উপদেষ্টার দায়িত্ব কী? জানতে চাইলে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘এমনিতে উপদেষ্টার দায়িত্ব উপদেশ দেয়া। কিন্তু এই উপদেশ কে শোনে! এটা একটি অলঙ্কারিক পদ। কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। যারা নির্যাতিত, যারা মুক্তিযোদ্ধা যাদের অবদান আছে তাদের এই পদ দিয়ে সম্মানিত করা হয়। আমাকেও নেত্রী দিয়েছেন।’
বিরোধী রাজনৈতিক দল এমনকি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আছে হাজারীর বিরুদ্ধে। তার এই নির্যাতন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে খবর পরিবেশন করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেকে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ সংসদ সদস্য থাকাকালীন হাজারী ও তার বাহিনীর নির্যাতনের কথা সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং কমিটি’ নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে সন্ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে হাজারীর দাবি, ‘স্টিয়ারিং কমিটি মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। আমার প্রধান শত্রু জামায়াত-শিবির। তাদের সঙ্গে লড়াই করে আমাকে বাঁচতে হয়েছে। তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। এর বাইরে আমার আর কিছু জানা নেই। যারা আমাকে বিতর্কিত বলে তারাই বলতে পারবে কেন বলে।’
জয়নাল হাজারীর ধারণা, ‘ফেনীর সবকিছু এখন নষ্ট হয়ে গেছে। খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু তার এখন আর তেমন কোনো শক্তি নেই যে তিনি ফেনী ফিরে গিয়ে সবকিছু ঠিক করে ফেলবেন। তিনি ফেনীতে ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও নেননি। তবে যদি শেখ হাসিনা বলেন তাহলে তিনি ফিরে যাবেন, সক্রিয় হবেন। এমনকি তিনি (শেখ হাসিনা) চাইলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনও করবেন।
নির্বাচন করলে আপনি কী ভোট পাবেন? আপনার কি জনপ্রিয়তা আছে? জবাবে হাজারী বলেন, ‘না আমার এখন কোনো জনপ্রিয়তা বলতে কিছু নেই। আমার জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। আমার মনে হয় আমি একটি ভোটও পাবো না। আমার শরীরের অবস্থাও ভালো না যে আবার মাঠে নামব।’
তারপও যদি মনোনয়ন পান, তাহলে কী হবে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে জনপ্রিয়তা লাগবে না। আওয়ামী লীগের লোকেরাই ভোট দিয়ে দেবে।’
‘ফেনীর গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত জয়নাল হাজারী তবে এখন নিজের সিদ্ধান্তে কিছুই করবেন না। তার কথা, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে