সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

অস্তিত্ব সংকটে ভারতের ভোডাফোন

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯
  • ২৬০ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: ভারত পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ টেলিকম বাজার। দেশটিতে গ্রাহকের সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। তারপরেও ভারতের অন্যতম বৃহৎ টেলিকম কোম্পানি ভোডাফোন ইন্ডিয়া রেকর্ড পরিমাণ লোকসান দিয়েছে। আর এ লোকসানের পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলার।

এই লোকসানের পেছনে মূলত দুটো কারণ দেখছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম । প্রথম কারণটি হচ্ছে, ভারতে বহু বছর যাবৎ টেলিফোন কলের রেট নিম্নগামী। দ্বিতীয় কারণটি সম্পর্কে বলা হচ্ছে, এ সময় টেলিফোন ডাটার দাম ছিল বেশি।

তিন বছর আগে রিলায়েন্সের জিও মোবাইল নেটওয়ার্ক বাজারে আসার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এ কোম্পানিটি মোবাইল ডাটার দাম কমিয়ে দেয়। ফলে গ্রাহকরা টেলিফোনে কথা বলে খরচ করার চেয়ে ডাটা ব্যবহারে বেশি মনোযোগী। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপ ব্যবহার করতে থাকে। রিলায়েন্সের এ পদক্ষেপ অন্য কোম্পানিগুলোর ওপর অনেক চাপ তৈরি করে। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্য কোম্পানিগুলোও তাদের মোবাইল ডাটার দাম কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের লাভ কমে লোকসানের দিকে যাত্রা শুরু হয়।

বিবিসি বলছে, টেলিকম কোম্পানিগুলো যা আয় করে তার একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারের টেলিকম ডিপার্টমেন্টকে দিতে হয়। এ নিয়ে টেলিকম কোম্পানিগুলো এবং সরকারের মধ্য ২০০৫ সাল থেকেই মতবিরোধ চলছিল। কোম্পানিগুলো চেয়েছিল তাদের লভ্যাংশ থেকে সরকারকে দিতে। কিন্তু সরকার এর চেয়েও বেশি চেয়েছে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলোর সম্পদ বিক্রি এবং জমানো অর্থের সুদের ওপরও অংশ দাবি করে সরকার।

সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি নিয়ে সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছে। ফলে টেলিফোন কোম্পানিগুলো সরকারকে ৯০ হাজার কোটি রুপি দিতে বাধ্য হবে। এর মধ্যে ভোডাফোন ইন্ডিয়া এককভাবে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি রুপি। এর ফলে তাদের লোকসানের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে।

সম্প্রতি ভোডাফোনের প্রধান নির্বাহী নিক রিড সতর্ক করে বলেছেন, ভারতে কোম্পানির কার্যক্রম সংশয়ের মধ্যে পড়বে যদি সরকার কর এবং নানাবিধ চার্জ আরোপের মাধ্যমে আঘাত করা বন্ধ না করে।
ভোডাফোন ভারতের কোম্পানির সাথে যৌথভাবে কোম্পানি গঠন করে ব্যবসা করছে। ফলে এই কোম্পানিটি ভারতের টেলিকম বাজারের ২৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।

ভোডাফোনের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘বৈরি আইন-কানুন, অতিরিক্ত কর এবং সর্বোপরি সুপ্রিম কোর্টের নেতিবাচক সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের ওপর বড় ধরনের বোঝা তৈরি হয়েছে।’ অবশ্য তিনি এ-ও বলেছেন যে, ভারত ছেড়ে যাবার কোনো ইচ্ছে নেই ভোডাফোনের।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভোডাফোন তাদের কোম্পানিতে নতুন কোনো বিনিয়োগ করছে না। ভারতে তাদের অংশীদার আদিত্য বিরলা গ্রুপও নতুন বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয়। তারা যদি কোম্পানিতে বিনিয়োগ না করে এবং এ অবস্থা যদি বজায় থাকে তার অর্থ হচ্ছে ভারতের বাজার ছেড়ে চলে যাবার সম্ভাবনা বেশি ভোডাফোনের।

তবে কথা হলো, ভোডাফোনের মতো একটি বড় কোম্পানি যদি বাজার থেকে চলে যায় তাহলে সেটে ভারতের জন্য মোটেও কোনো ভালো খবর নয়। কারণ এখানে শুধু সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত নয়। গত ১০ বছর ধরে সরকার এবং ভোডাফোনের মধ্যে কর নিয়ে বিতণ্ডা চলেছে। যদি ভোডাফোনের মতো একটি কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়ে নেয়, তাহলে অন্য কোম্পানিগুলো ভারতে বিনিয়োগ করার ব্যাপারে দুইবার চিন্তা করবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভোডাফোন থাকুক কিংবা না থাকুক-ভারতে মোবাইল ফোনের খরচ বাড়বে। তারা বলছেন, খরচ বৃদ্ধি পাওয়া খারাপ কিছু নয়। কারণ এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়বে। ভারতের বাজারে টিকে থাকার জন্য এটার প্রয়োজন রয়েছে।

কিন্তু যদি ভোডাফোন ব্যবসা গুটিয়ে নেয় তাহলে বাজারে দুটো কোম্পানি থাকবে। যেকোনো বাজারের জন্য শুধু দুটো কোম্পানি থাকা মোটেও ভালো খবর নয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com