বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর ৪টি আবাসিক হলে অভিযান চালিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পুলিশের সহায়তায় শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। অভিযান শেষে ৪ বস্তা পাথর, বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র ও জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার রাত ৯টার দিকে অভিযান পরবর্তী সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা জানান চট্টগ্রাম জেলা (উত্তর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা।
তিনি বলেন, গতকালের সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে শাহ আমানত, শাহজালাল, সোহরাওয়ার্দী ও শহীদ আবদুর রব হলে তল্লাশি চালিয়ে বেশকিছু অস্ত্র, রামদা, ৩-৪ বস্তা পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মনিরুল হাসান বলেন, সন্দেহের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি হলে অভিযান চালানো হয়েছে। এতে কিছু লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে। রুমে কেউ না থাকায় কাউকে আটক করা যায়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে শহীদ আবদুর রব হলের আবাসিক হলের টেলিভিশন কক্ষে সভা করা নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষ ভিএক্স ও সিএফসির মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে ওই রাতেই উভয় পক্ষের সিনিয়ির নেতাদের উপস্থিতিতে ঘটনার তাৎক্ষণিক সমাধান করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এ ঘটনার জেরে শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে আবাসিক হলটিতে ফের সংঘর্ষে জড়ায় উভয় পক্ষ।
বিবাদমান পক্ষ দুটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী উপগ্রুপ ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি)’ ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুলের অনুসারী ‘ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স)’। এর মধ্যে রুবেল আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং বিপুল নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এই দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছিলেন সিএফসি কর্মী ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তাপস সরকার।
এদিকে সংঘাতের জন্য পাল্টাপাল্টি দায়ী করছে ছাত্রলীগের পক্ষ দুটি। সিএফসি উপগ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলতে শহীদ তাপস স্মৃতি সংসদ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাপসের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঘটনার বিচারের দাবিতে তার বন্ধু-সহপাঠীরা সক্রিয় হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না তাপসের হত্যাকারী এবং সে সময় হত্যাকারীদের প্রশ্রয় দেয়া একটি চক্র। তাই বিনা উস্কানিতে ছাত্রলীগের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করে বিভক্তি আনতে ও বিচারের দাবিকে বাধাগ্রস্ত করতে চক্রটি এই সংঘর্ষ বাধিয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের ডাকলেও কোনো সাড়া দিচ্ছে না তারা।
এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন ভিএক্স পক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মিজানুর রহমান বিপুল। তিনি বলেন, আমরা যখন ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন দাবি তুলে সাংগঠনিক ফরমেটে কাজ শুরু করেছি, ঠিক তখনই এ সংঘাত বাধিয়েছে সভাপতি। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা সমাধানের পরও শুক্রবার রাতে শহীদ আব্দুর রব হলে থাকা আমাদের নেতাকর্মীদের কক্ষের দরজা ভেঙে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়েছে। তাই ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারসহ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোনো সমাধান না আসে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সভাপতি রুবেলকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হবে।