নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থী নাইমুল আবরার রাহাতের অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া অপর আসামিরা হলেন- প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, হেড অব ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন কবির বকুল, নির্বাহী শুভাশীষ প্রামাণিক, নির্বাহী শাহপরাণ তুষার, কিশোর আলোর জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক মহিতুল আলম, ডেকোরেশন ও জেনারেটর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের জসীম উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন, সুজন ও কামরুল হাওলাদার।
এ দিন মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ প্রথম আলোর সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এরপর বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শুনানি নিয়ে ওই ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এ আদেশ দেন।
আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক আসিফ তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেয়ার বিষয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, প্রথম আলো, কিশোর আলো, বন্ধুসভা যে অনুষ্ঠান করেছিল, তাতে বিদ্যুৎ সরবরাহে অব্যবস্থাপনা ছিল। তাদের গাফিলতির কারণে আবরারের মৃত্যু হয়। তাই সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক। শুনানির সময় আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর নিহত আবরারের বাবা মো. মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি করেন। ওই দিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবরারের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় করা অপমৃত্যুর মামলা ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলাটি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১ নভেম্বর মোহাম্মদপুর রেসিডেনশিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কিশোরদের মাসিক সাময়িকী কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠান দেখার জন্য স্কুলের নবম শ্রেণির দিবা শাখার ছাত্র নাইমুল আবরার রাহাত (১৫)যায়।
অনুষ্ঠানটি চলাকালে মঞ্চের পেছনে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে আবরার অজ্ঞান হয়ে পড়ে। অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয় তা অরক্ষিত ছিল। এমন অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার যে নিরাপত্তামূলক ও সাবধানতা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। ঘটনাস্থলের কাছেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল অবস্থিত। এরপরও আবরারকে সেখানে না নিয়ে মহাখালীতে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে’ নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবরাবের ডেথ সার্টিফিকেট দেয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আবরার ওই দিন বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে ভর্তি হন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বিকাল ৪টা ৫১ মিনিটে মৃত ঘোষণা করেন। অর্থাৎ আবরার বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়ার ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আবরারের মৃত্যুর সংবাদ কিশোর আলো ও স্কুল কর্তৃপক্ষ গোপন করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গানের অনুষ্ঠান চালিয়ে যান। এক সহপাঠী আবরারের মৃত্যুর খবর তার পরিবারকে জানায়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, মজিবুর রহমান তার ছেলের লাশ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন। আসামিরা আবরারের মৃত্যুকে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নিতে চাপ দেন। আবরারের বাবা ছেলের লাশ চাইলে তাকে আসামিরা জানান যে, ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নিতে হলে মুচলেকাসহ আবেদন করলে দ্রুত নেয়া যাবে। এ সময় মুজিবুর রহমানকে ভুল বুঝিয়ে তার কাছ থেকে একটি লিখিত নিশ্চিয়নপত্র নেয়া হয়। এতে করে আবরারের লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মোহাম্মদপুর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আবরারের মৃত্যুর ঘটনাটি অপমৃত্যু নয়। বরং আসামিদের চরম অবহেলা, অযত্ন, অমনোযোগী, গাফিলতি, অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসার অবহেলা এবং অসাবধানতার কারণে আবরারের মৃত্যু হয়।