অনলাইন ডেস্ক, সিটিজেন নিউজ: ঋণ ফাঁদ বা ডেব্ট ট্র্যাপ তৈরির আশঙ্কার মধ্যেও বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরের সময়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) উদ্যোগ প্রসারের লক্ষ্যে দু’দেশ একটি চুক্তি সই করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময় দুই দেশ বিআরআই-এর অধীনে ৫৭০ কোটি ডলারের ১১টি প্রকল্পের চুক্তি সই করেছে। এই চুক্তির আওতায় চীনা মুদ্রায় ১২৩০ কোটি রেনমিনবি (১৮০ কোটি ডলার) সহজ শর্তে ঋণ দেবে দেশটি। এছাড়া, ৩৯০ কোটি ডলার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক্সপোর্ট বায়ার ঋণ দেবে চীন।
এই ১১টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— পদ্মা ব্রিজ রেলওয়ে লিংক, দাসেরকান্দি স্যুয়ারেজ লাইন, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল, আইসিটি প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে ঋণ এবং টেলিকম খাত আধুনিকীকরণ। ১১টির মধ্যে ৯টি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।
এর বাইরে আরও পাচঁটি বড় প্রকল্পে ঋণের বিষয়ে নীতিগত সম্মত হয়েছে চীন। এরমধ্যে একটি প্রকল্প হচ্ছে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।
চীন সরকার তাদের স্বচ্ছ নীতির কথা বললেও বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সাবধানে চলার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি যেন ওপেন টিকিট না হয়ে যায়। অর্থাৎ যেনতেন প্রকল্পে ঋণ না নেওয়া হয়।’
কী শর্তে ঋণ নেওয়া হচ্ছে এবং সুদের হার কী, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদের হার যেন অতিরিক্ত না হয় সে বিষয়ে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন মির্জা আজিজুল ইসলাম ।
তিনি বলেন, ‘যদি প্রকল্পগুলো আমাদের রফতানি খাতকে সহায়তা দেয়, তবে এটি আমাদের জন্য সহায়ক হবে। কারণ, রফতানি আয় থেকে প্রাপ্য বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে ঋণ শোধ করা সহজ হবে।’
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণ সহনীয় সীমার মধ্যে রয়েছে এবং বাড়তি ঋণ নেওয়ার কিছুটা সুযোগ আছে বলে মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।
তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এটি যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায় এবং অনুৎপাদনশীল খাতে যেন ঋণ না নেওয়া হয়।’
উল্লেখ্য, হাম্বানতোতা গভীর সুমদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। পরবর্তীতে ঋণ শোধ করতে না পারায় ২০১৭ সালে ওই বন্দরকে চীনের কাছে হস্তান্তর করে কলম্বো।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং ঝু ঋণ ফাঁদের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার দেশের এ ধরনের কোনও নীতি নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে সহযোগিতার চেষ্টা করছি। কাউকে ফাঁদে ফেলার উদ্দেশ্য আমাদের নেই।’
চীনের নীতি অত্যন্ত স্বচ্ছ ও বাজারভিত্তিক এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বিআরআই-এর উদ্যোগে যোগ দিয়েছে। কারণ, তারা চীনকে বিশ্বাস করে বলেও তিনি জানান।