আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গোটা বিশ্ব ধুঁকছে অর্থনৈতিক মন্দায়। বিশ্ব অর্থনীতির ধীরগতির জন্য ভারতকে দায়ী করলেন ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ।
এনডিটিভিক দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতীয় অর্থনীতিকে মন্দা গ্রাস করছে। ফলে বিশ্বের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। ভারতীয় জিডিপির পতনের প্রভাব পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতে পড়েছে। ভারতীয় অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ০.১ শতাংশ কমতে পারে।
ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নিয়ে পূর্বাভাস করতে গিয়ে আইএমএফ তা দাঁড় করিয়েছে ৪.৮ শতাংশে। ওই পূর্বাভাসে গত তিন মাসের মধ্যেই যা নেমে গিয়েছে ১.৩ শতাংশ নিচে। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি ছাড়াও এ দেশের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও পর্যবেক্ষণ রয়েছে আইএমএফের।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) বিরুদ্ধে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ-সহিংসতায় এখনো উত্তাল ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত। যদিও এ নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
বলেন, ভারতের সম্পর্কে বিশেষ কিছু বক্তব্য নেই। তবে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ নিয়ে আইএমএফ যে পর্যালোচনা করবে এবং তা বিষয়টির গতিবিধির ওপর নজর রাখা হবে। এপ্রিলে আমাদের পরবর্তী পর্যালোচনায় তা কোথায় দাঁড়ায়, সেটাও দেখব।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে গত সোমবার শুরু হয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ৫০তম বার্ষিক সম্মেলন। সেখানে বিশ্ব অর্থনীতির একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেছে আইএমএফ। স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক বিষয়ের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামাজিক পরিস্থিতি নিয়েও পর্যবেক্ষণ রয়েছে ওই প্রতিবেনে।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ নামের প্রতিবেদনে আইএমএফ জানিয়েছে, বিশ্বের বহু দেশে সামাজিক অস্থিরতা তীব্রতর হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থাহীনতার প্রতিফলন ঘটছে। এ বিষয়গুলো সমাধানের কোনো সংস্থান প্রশাসনিক পরিকাঠামোয় নেই বলেও মনে করছে আইএমএফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ২.৯ শতাংশ, যদিও ২০২০ সালে তার থেকে সামান্য উন্নতি হয়ে সেটি পৌঁছে যাবে ৩.৩ শতাংশে। এর পরে, ২০২১ সালে সেটি ৩.৪ শতাংশ হওয়ার সম্ভাবনা।
এর আগে, আইএমএফ গত বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় গোটা বিশ্বের তুলনায় ২০১৯ এবং ২০২০-এর সর্বশেষ অনুমান ০.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২১ সালের প্রবৃদ্ধির অনুমান ০.২ শতাংশ পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
ইউরোপীয় দেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো উন্নত দেশের তুলনায় ভারতের অর্থনীতির হাল আরো খারাপ। একবছর আগেও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অর্থনীতিই বিকশিত হত সবচেয়ে দ্রুত গতিতে। কিন্তু এখন তা উন্নয়নশীল দেশগুলির তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে।
গীতার মতে, ভারতে সব থেকে সংকটে রয়েছে আর্থিক খাত। বিশেষ করে নন ব্যাংকিং ফিন্যান্স করপোরেশনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। ঋণের বৃদ্ধি হচ্ছে না, অর্থাৎ বাজারের অবস্থা দেখে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাও কমছে। আর তার পাশাপাশিই গ্রামীণ এলাকায় আয়ে কোনো বৃদ্ধিই হচ্ছে না। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাহিদা কমে গিয়েছে।
২০২০ সালে বিশ্বের অর্থনৈতিক বিকাশের গতি বর্তমানে খুব অনিশ্চিত। এটি আর্জেন্টিনা, ইরান এবং তুরস্কের মতো দেশগুলোর অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং ব্রাজিল, ভারত এবং মেক্সিকোর মতো দ্রুত উন্নয়নশীল এবং অল্প-উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার ওপরও নির্ভরশীল।