অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য একক পণ্যনির্ভর রফতানি থেকে বেরিয়ে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি। সেই সঙ্গে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা পোশাক খাতের বাইরে অন্য রফতানিমুখী শিল্পে সম্প্রসারণের বিকল্প নেই।
এ ছাড়া সব পণ্যের জন্য অভিন্ন ও কেন্দ্রীয় বন্ডেড ওয়্যারহাউস সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও ব্যবসার পরিবেশ দ্রুত উন্নয়নের মাধ্যমে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
দু’দিনের এ সম্মেলনে দ্বিতীয় ও শেষ দিনে হয় ‘চ্যালেঞ্জ অব এক্সপোর্ট গ্রোথ অ্যান্ড ডাইভারসিফিকেশন ইন বাংলাদেশ: দ্য কেস অব বন্ডেড ওয়্যারহাউস মর্ডানাইজেশন’ শীর্ষক অধিবেশন।
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ইকোনমিস্ট ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মশরুর রেজার সভাপতিত্বে এ অধিবেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিষ্ট নুশরাত নাহিদ বাবি। আলোচক ছিলেন কাস্টম অ্যান্ড বন্ড কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার ড. আবু নূর রাশেদ আহমেদ, কে কে খান টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম এবং নেওয়াজ গ্রুপের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
জাইদী সাত্তার বলেন, রফতানি বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। এ জন্য সব রফতানি পণ্যের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সিস্টেম রফতানিবান্ধব করতে হবে। এ সিস্টেমকে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক করতে হবে। তৈরি পোশাক খাতে যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে সেটি অন্য শিল্পেও কাজে লাগানো যায়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে হাইটাইম পার করছে। এ সময় শুধু অদক্ষ শ্রমিক ও স্বল্প মজুরির ওপর নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়। বর্তমানে পোশাক খাতের বাইরে অনেক পণ্য রফতানি হলেও সেগুলো থেকে বৈদেশিক আয় আসছে সামান্য।
তবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে ২০২৭ সালের পর অনেক সুবিধাই বন্ধ হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। স্পেশাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস সিস্টেম চালু করার সঙ্গে ভারত, শ্রীলংকা ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ কীভাবে রফতানি বহুমুখীকরণ করেছে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে হবে।
নুশরাত নাহিদ বাবি বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউস সিস্টেম সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। অন্য খাতে যাতে এ সুবিধা দেয়া যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের অনেক পলিসি রয়েছে সেগুলো সমস্যা না থাকলেও প্র্যাকটিসে সমস্যা রয়েছে।
ট্যারিফ নন-ট্যারিফ বাধা দূর করতে কাজ করতে হবে। আবু নূর রাশেদ আহমেদ বলেন, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কিন্তু পোশাক খাতের বাইরে অন্য শিল্প সংশ্লিষ্টরা বন্ডেড ওয়্যারহাউসের লাইসেন্স করতে আবেদন করছে না। কিছু সাধারণ শর্ত পূরণ করলেই লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে।
আসিফ ইব্রাহিম বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামো ও নীতিগত সহায়তা জরুরি। আমরা দ্রুত কিছু করতে পারিনি। ফলে চীন ও মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের যে সম্ভাবনা ছিল তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। কোনো সুযোগই বেশিদিন স্থায়ী হয় না।
যেমন, স্যামসাং একটি বড় বিনিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এখানে কারখানা করতে না পারায় তারা ভিয়েতনামে চলে গেছে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
মাশরুর রেজা বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতির খুবই প্রয়োজন। রক্ষণশীল ট্যারিফ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এনবিআরের দক্ষতা বাড়াতে হবে। সব ক্ষেত্রেই লিকেজ কমিয়ে আনতে হবে। নীতিমালা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও কৌশল জরুরি।
আবুল কাশেম খান বলেন, ৮০-র দশকে শ্রীলংকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের পোশাক শিল্প এগিয়ে গেছে। চীনের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটি আরও ১০ বছর আগের তৈরি। ভিয়েতনাম সেই সুযোগ কাজে লাগাতে নানা কৌশল নিয়েছে।
রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলেমিশে একাকার -প্রফেসর রেহমান সোবহান : ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অব ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অপর এক অধিবেশনে অংশ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেছেন, বাংলাদেশে এখন রাজনীতি ও অর্থনীতি মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
ফলে সুবিধাবাদী একটি মহল তৈরি হয়েছে। তারা নিজেরাই পলিসি তৈরি করছে এবং তা নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করছে। এ ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। দিনব্যাপী আরও কয়েকটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনের দু’দিনে বিভিন্ন অধিবেশনে সামষ্টিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, শ্রমবাজার, দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিষয়ে ৬৫ জন গবেষক তাদের গবেষণাকর্ম উপস্থাপন করেন। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপালের ২৬ জন গবেষক অংশ নিয়েছেন।