ক্রীড়া ডেস্ক, সিটিজেন নিউজ: প্রতিপক্ষ সমর্থককে ঘুষি মারার অপরাধে ৩ ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার খড়গে শনিবার অ্যাঙ্গার্সের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলারই কথা ছিল না তার। কিন্তু পিএসজি তার নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায়, নিষেধাজ্ঞাটা আপাত স্থগিত রয়েছে। সেই সুবাদে কাল অ্যাঙ্গার্সের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়েই জাদু দেখালেন নেইমার।
ব্রাজিলিয়ান তারকা কাল নিজে একটা গোল করেছেন। সতীর্থ অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়াকে দিয়ে একটা করিয়েছেন। টানা তিন ম্যাচের খরা কাটিয়ে ১০ জনের দল পিএসজিকে এনে দিয়েছেন ২-১ গোলের জয়। তবে নিজে দুর্দান্ত গোল করা, সতীর্থকে গোল করানোর চেয়েও নেইমার কাল বেশি প্রশংসিত হয়েছেন অবিশ্বাস্য একটা ড্রিবলিং জাদুর সুবাদে।
দু-পায়ের সংমিশ্রণে বল নিয়ে কি জাদুটাই না দেখালেন নেইমার। যেন পা দিয়ে বলকে কথা বলাচ্ছেন! তার সামনে অ্যাঙ্গার্সের দুই ডিফেন্ডার। সীমানার কাছে বলে জায়গা তৈরি করার সুযোগ ছিল না। কি করা যায়! মুহূর্তেই নেইমারের মাথায় খেলে যায় ওই অবিশ্বাস্য ড্রিবলিং জাদুর কথা। পায়ের কাছে থাকা বলটাকে প্রথমে বাঁ-পায়ের গোড়ালি দিয়ে টোকা মেরে উপরে তুললেন, মানে ভাসালেন।
বলটা তার মাথার উপর দিয়ে পেছনে দিকে পড়ছিল। এরপর ডান পায়ের গোড়ালি উল্টো করে সজোরে আরেক টোকা মারলেন। বল তার পায়ের কথা মতো অ্যাঙ্গার্সের দুই ডিফেন্ডারের মাথার উপর দিয়ে সামনের দিকে পড়ল। নেইমার সহজেই দৌড়ে গিয়ে বল নিজের নিয়ন্ত্রণে নিলেন। এরপর পাস বাড়ালেন সতীর্থকে।
২৭ বছর বয়সী নেইমার ম্যাচটিতে ঘটিয়েছে আরও একটা মজার কাণ্ড। মজার ছলে বিশেষ ভঙ্গিতে গোল উদযাপন করে মনে করিয়েছেন ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ চলাকালে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ দলের তারকাদের নিয়ে নাইকির সেই বিখ্যাত বিমানবন্দর বিজ্ঞাপন চিত্রটিকে।
ফ্রান্সের বিমানবন্দরে চিত্রায়িত বিজ্ঞাপন চিত্রটিতে ব্রাজিলের তৎকালীন তারকা রোনাল্ডো রোজারিও, রোমারিও, ডেনিলসন, লিওনার্দো, কাফু, রবার্তো কার্লোসরা দল বেঁধে বিশেষ ভঙ্গিতে নৃত্য করেন। বল নিয়ে নানা কারিকুরিও দেখান তারা।
বিজ্ঞাপন চিত্রটির ভিডিও বিশ্বব্যাপী বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। ধুলোর আস্তরণ পড়ে স্মৃতির আড়াল হওয়া সেই বিজ্ঞাপন চিত্রটি নতুন করে মনে করালেন নেইমার। গোল করার পর নিজের হাত দুটোকে কল্পনার বন্দুক বানিয়ে কল্পনার গুলি ছুড়লেন।
দর্শকরা তো বটেই, পিএসজির অন্য খেলোয়াড়রাও নেইমারের সেই বিশেষ ভঙ্গির উদযাপনে ব্যাপক মজা পেয়েছেন। সতীর্থ এডিনসন কাভানি তো বাঁ-হাত মাথায় তুলে নেইমারকে স্যালুটই জানিয়েছেন! সব মিলে গতকালের ম্যাচটা ছিল নেইমারময়।
আর নেইমারময় ম্যাচটাতে জিয়ানলুইজি বুফন, মারকুইনহোস, ডি মারিয়া, ফ্লাভেন টেইটরা খণ্ড খণ্ড ঘটনায় আলোচনায় ছিলেন। পিএসজির ইতালিয়ান গোলরক্ষক বুফন বিশেষ নজর কেড়েছেন প্রতিপক্ষ অ্যাঙ্গার্সের ফ্লাভেন টেইটের পেনাল্টি ঠেকিয়ে। ফ্লাভেন যেমন পেনাল্টি মিস করেছেন, ওই মিসের কয়েক সেকেন্ড পরই আবার দর্শনীয় এক গোল করেছেন।
নেইমারের পাস থেকে পিএসজির দ্বিতীয় গোলটি যে আর্জেন্টাইন তারকা ডি মারিয়া করেছেন সেটি তো আগেই বলা হয়েছে। নেইমারের স্বদেশি মারকুইনহোস আলোচিত হয়েছেন সরাসরি লালকার্ড দেখে।
তবে সব ছাপিয়ে নায়ক নেইমার। ম্যাচের ২০ মিনিটেই দর্শনীয় ডাইভিং হেডে পিএসজিকে এগিয়ে দেন তিনি। পিএসজির হয়ে যেটি তার ৫১তম গোল। এরপর ৫৮ মিনিটে তার পাস থেকেই ব্যবধান ২-০ করেন ডি মারিয়া। এরপর মারকুইনহোসের লালকার্ড, তার ফাউল থেকে অ্যাঙ্গার্সের পেনাল্টি পাওয়া, টেইটের মিস, বুফনের সেভ— এই মহানাটকটা ঘটে ৮৫ মিনিটে। পেনাল্টি মিসের হতাশা ভুলে টেইট অ্যাঙ্গার্সের একমাত্র গোলটাও করেন ওই ৮৫ মিনিটেই, মিস কাণ্ডের কয়েক সেকেন্ড পর।
পিএসজি টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগ শিরোপা জিতে নিয়েছে আগেই। কিন্তু তারপরই যেন কী হয়ে যায়! সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন কাটাতে হয় তাদের। কাল সেই খরা কাটল নেইমারময় ম্যাচে নেইমার জাদুতে।