বিশেষ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। যখন যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হচ্ছে। এ মুহূর্তে আমাদের কোনো খাদ্য সংকট নেই। সরকারি গুদামে যেমন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার মজুদ রয়েছে, তেমনি রয়েছে গৃহস্থদের ঘরে ঘরে।’
সোমবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।
গত মৌসুমে রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বোরো ধানেরও ভালো ফলন হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। খাদ্য ও কৃষি পণ্য সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা অটুট রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
এই দুঃসময়ে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা শুধু সচল রাখা নয়, আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে যাতে কোনোপ্রকার খাদ্য সংকট না হয়, সেজন্য আমাদের একখণ্ড জমিও ফেলে রাখা চলবে না। এজন্য কৃষি-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বীজ, সার, কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণের ঘাটতি যাতে না হয় এবং সময়মতো কৃষকের হাতে পৌঁছে-সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। ’
কৃষকেরা যাতে উৎপাদিত বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পান সেজন্য চলতি মৌসুমে গত বছরের চেয়ে ২ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত ধান ক্রয় করা হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এজন্য অতিরিক্ত ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ তহবিল থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষিদের কৃষি, মৎস্য, ডেইরি এবং পোল্ট্রি খাতে ৪ শতাংশ সুদহারে ঋণ দেওয়া হবে। কৃষি ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।’
ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা আনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দরিদ্র জনগণের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণে এগিয়ে এসেছেন। তবে, এসব ত্রাণসামগ্রী ও সহায়তা বিচ্ছিন্নভাবে না বিলিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে শৃঙ্খলার সঙ্গে বিতরণ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাবে। আমি বিত্তবানদের এই সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকাবস্থায় সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের সংকট সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না। ভয় মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে। কেউ আতঙ্ক ছড়াবেন না। আমাদের সবাইকে সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।’
এ সময় গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার সবসময় আপনার পাশে আছে। কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ সংকটকালে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। মিডিয়াকর্মীদের প্রতি অনুরোধ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক তথ্য তুলে ধরে এই মহামারি মোকাবিলা করতে আমাদের সহায়তা করুন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে আঁধার আমাদের চারপাশকে ঘিরে ধরেছে, তা একদিন কেটে যাবেই। বাঙালি বীরের জাতি। অতীতে নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বাঙালি জাতি সাহসের সঙ্গে সেগুলো মোকাবিলা করেছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি আমরা। আমরা সম্মিলিতভাবে করোনাভাইরাসজনিত মহামারিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।