রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৪ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা শনাক্তের চেয়ে ৪০ গুণ বেশি: আইইডিসিআর এর উপদেষ্টা

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ মে, ২০২০
  • ১৬০ বার পঠিত

ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা শনাক্তের চেয়ে ৪০ গুণ বেশি বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এর অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে এ তথ্য দিয়েছেন তিনি।

আজ শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৬৫ জন। আর মারা গেছেন ২৯৮ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ৮৮২ জন।

ওই টকশোতে ডা. মুশতাক হোসেন দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো :

এটা ঠিক যে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের জীবন জীবিকার একটা বিরাট সমস্যা আছে, যে দুর্ভিক্ষে মারা যাওয়া ভালো নাকি করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ভালো। মানে দুটো খারাপ জিনিজের মধ্যে কোনটা বেছে নেওয়া যাবে, এটা সমাজের সর্বস্তরে আলোচনা হচ্ছে। যারা সরকার চালাচ্ছেন, এটা তাদেরও বড় একটা সমস্যা। কিন্তু এখানে আমাদের কীভাবে সমন্বয় করা যায় সেটা আরও ভাবতে হবে।

আমরা অবশ্যই জীবনকে বাঁচাব। এতে যে বিষয়গুলো আসে যেমন, ফোরকাস্টিং- এটায় কিন্তু বিভ্রান্ত হয়েছে মানুষ। যখন রোজার সময় ইফতারির জন্য দোকান খুলে দেওয়া হলো, সে সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়নি। তখন আমার মনে হলো, শৈথিল্যের জায়গায় চলে এসেছি। তারপর বলা হলো, ঈদের বাজার করা যাবে! এটা আরেকটা বিরাট ভুল হয়েছে। বলা উচিৎ ছিল, আমরা জরুরি কেনাকাটা, অনেক দোকানপাট বন্ধ আছে, অনেকে দীর্ঘদিন ধরে বেকার আছে, অনেকে বেতন পাচ্ছে না, মাস শেষ হেয় গেছে; আমরা জরুরি প্রয়োজনে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান খুলব, কিছু কিছু দোকান খুলব।

আমি উদাহরণ পেয়েছি গণমাধ্যমে। যেমন, আমার মোবাইলটি যদি ভেঙে যায় হাত থেকে পড়ে, এটার একটা ছোট্ট পার্টস লাগবে। সেটার আমি কিছু করতে পারব না। ছোট্ট একটা মোবাইলের দোকান খুলতে পারে, সকালে বা যখন ভিড় কম থাকে। এভাবে করা যায়। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলকভাবে খুলতে পারব। আমাদের ঈদের কথা বলা হলো, বলা হলো রোজা, ইফতার, এলাকার মসজিদ খোলার কথা। আমার মনে হয়, যারা নীতি নির্ধারক তারা হয়তো মনে করেছেন, এতদিন যখন ভাইরাসটা বাংলাদেশে আছে, এটা হয়তো আর কিছু হবে না।

আমার কাছে খুব বিভ্রান্তিকর খবর আছে, খুব বেশি হলে (করোনাভাইরাসে) এক হাজার মানুষ মারা যাবে। বাংলাদেশে প্রতিদিন রোড অ্যাক্সিডেন্টে কত মানুষ মারা যাচ্ছে? কিংবা ভারত থেকে কিছু বিজ্ঞানী বললেন, বাংলাদেশে ভাইরাসটা দুর্বল হয়ে গেছে, আবার কতজন বললেন, দলগতভাবে আমরা ভাইরাসটা প্রতিরোধ করব।

ব্রিটেনে বহু লোক মারা যাচ্ছে, সুইডেনে মারা যাচ্ছে। এখন বিষয়টা হলো এই সংক্রমণটা আমাদের বাড়ছে। আমাদের দেশে একটা বৈশিষ্ট আছে, এখন পর্যন্ত- কোথাও কিন্তু ঘণীভূত মহামারি নেই। চীনের উহানের মতো বা আমেরিকার নিউইয়র্কের মতো হাজার হাজার, লাখ লাখ লোক আক্রান্ত, শত শত লোক মারা যায়নি। আমাদের দেশে মহামারিটা কিন্তু সব জায়গায় জেনারালাইজড। সব জায়গায় ছোট্ট ছোট্ট একটা পকেটে ক্লাস্টার দিয়ে কিন্তু আমরা ছোট ছোট গুচ্ছ গুচ্ছ-কত হাজার গুচ্ছ আছে। প্রত্যেকটা গুচ্ছ থেকে যদি দুটো করে লোক বাড়ে তাহলে দুই হাজার লোক জমে যাচ্ছে। এতে বিপদের সম্ভাবনা কম।

এক জায়গায় বহুজন আক্রান্ত হলে, যারা বয়স্ক মানুষ, যাদের অন্য কোনো অসুখ আছে, এমনকি মাঝবয়সী মানুষও কিন্তু মারা যাচ্ছে। আর মৃত্যু হার অনেক বেড়ে যায়। আর যদি আমরা সীমাবদ্ধ রাখতে পারি, বিভিন্ন ক্লাস্টারে, সেটার এখনো সম্ভাবনা আছে।

ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় আমরা যে রোগীর সংখ্যা পেয়েছি, আমি যদি সবচেয়ে রক্ষণশীল হিসাব করি ১০-১২ গুণ মানুষ এর বাইরে আছে। যারা নিজেরাও লক্ষণযুক্ত বা লক্ষণ নেই। আর যদি উদার হিসাব করি, তাহলে ৩০ থেকে ৪০ গুণ মানুষ এর বাইরে আছে। অর্থাৎ এখন যদি ১৮ হাজার হয়, তার ৪০ গুণ হতে পারে। এরা হচ্ছে মৃদু লক্ষণযুক্ত। এদের ঘরের ভেতর রাখতে হবে। না পারলে এ মৃদু লক্ষণ থেকে রোগটা ছড়িয়ে একজন বয়স্ক মানুষের কাছে যাবে, ডায়বেটিস আছে এমন একজনের কাছে যাবে। সে কিন্তু বিপদে পড়বে।

কাজেই সমগ্র ক্লাস্টারে আমরা যদি সীমাবদ্ধতা আনতে পারি, যেখানে ক্লাস্টার নেই সেখানে আমরা সীমিতভাবে কাজ করতে পারি। সীমিতভাবে জরুরি কাজ করা যায়। আমি সবকিছু দীর্ঘদিন ধরে কারফিউ দিয়ে বন্ধ করতে পারি না। এমন কোনো কথা না যে আমি টানা দুই সপ্তাহ কারফিউ দিলাম, ব্যাস মুক্ত! না…এই লকডাউনে যে বিধিনিষেধ আছে, যে সামাজিক বিধিনিষেধ আছে, তার মধ্যে সীমিত আকারে যদি আমরা কাজ করতে পারি, আমরা দূরত্ব রাখতে পারি, সাবান দিয়ে হাত ধুই, তাহলে এটা আস্তে আস্তে কমে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com