অনলাইন ডেস্ক: করোনাকালীন সংকটের কারণে সরকার ঘোষিত হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারের জন্য আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা কার্যক্রমের উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়নে অমানবিক অনিয়মের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একইসাথে, এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ সংশ্লিষ্ট কেলেঙ্কারির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করা ও কোনো পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
নগদ সহায়তা কার্যক্রমের তালিকায় অনেক বিত্তশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সচ্ছল আত্মীয় স্বজনের নাম থাকায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রকৃত হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত ও দুর্যোগের ফলে বিপন্ন অসচ্ছলদের হাতে যাতে এই সহায়তার টাকা পৌঁছে তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যারা এই অর্থ পাচ্ছেন বা পাবেন তাঁদের পূর্ণ তালিকা সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে ওয়েবসাইট-এ প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী একই মোবাইল নম্বর ২০০ জন উপকারভোগীর নামের বিপরীতে ব্যবহৃত হওয়ার ঘটনা কখনই অনিচ্ছাকৃত ভুলের অংশ হতে পারে না উল্লেখ করে আজ প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতির এই চরম সংকটময় মুহূর্তে সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গণমুখী উদ্যোগ এই কার্যক্রমে এক শ্রেণির অসাধু গোষ্ঠীর দুর্নীতি প্রবণ মানসিকতা ও কর্মকাণ্ডে আমরা হতাশ ও উদ্বিগ্ন।
দেশ এবং দেশের মানুষ এখন এক মহাসংকট কাল অতিবাহিত করছেন। সবচেয়ে বেশি বিপন্ন অবস্থায় আছেন হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন করোনা সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় বেকার হয়ে যাওয়া সমাজের খেটে খাওয়া মানুষেরা। সবধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর বাইরে থাকা এসব মানুষকে এই ক্রান্তিকালীন মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নগদ সহায়তা দেবার উদ্যোগ সাধুবাদ পাবার যোগ্য। কিন্তু তালিকা প্রণয়নে স্থানীয় পর্যায়ে অনিয়ম ও বিতরণে অদক্ষতা এবং সমন্বয়হীনতা পুরো কার্যক্রমকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে যাচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
এক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থে যাদের সহায়তা প্রয়োজন তারা যাতে উপকৃত হতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সহায়তাপ্রাপ্ত সকলের তালিকা ওয়েবসাইটসহ সর্বসাধারণের অভিগম্য উপায়ে প্রকাশ করা জরুরি। ”
দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে যে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে তাতে বিভিন্ন সময়ে ত্রাণ সামগ্রী চুরি ও আত্মসাৎসহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও সংঘটিত দুর্নীতি টিআইবির উদ্বেগের পুনরুল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলছেন “উপকারভোগীদের তালিকায় ক্ষেত্রবিশেষে বিত্তশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সচ্ছল আত্মীয় স্বজনের নাম থাকা সংশ্লিষ্টদের হীন ও পাশবিক মানসিকতার পরিচয় বহন করে। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল হয়েছে মাঠ প্রশাসনের এমন অজুহাতও ধর্তব্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানসহ এই বিষয়ে তাঁর সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কার্যকর কোনো দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা জানাই।
মোবাইল নম্বরের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর মিলিয়ে উপকারভোগীদের অর্থ পরিশোধ করা হবে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এমন বক্তব্য আশাবাদ তৈরি করলেও- যথেষ্ট নয়, অনিয়মের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি ।
সম্প্রতি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের ক্ষেত্রে সংঘটিত অনিয়মের কথা উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, “চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে জাতীর এই সংকটকালীন মুহূর্তে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে করোনা আক্রান্তসহ অন্যদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে সেই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অপরিহার্য উপাদান মাস্ক সরবরাহের ক্ষেত্রে সংঘটিত অনিয়মের ঘটনার এখনও কোনো সুরাহা হয়নি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দাখিল হওয়া সত্ত্বেও ঘটনার এতদিন অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এখনও প্রতিবেদনটি দেখার সুযোগ পাননি, কোনো পদক্ষেপও গৃহীত হয়নি, যা সত্যিই দুঃখজনক। প্রশ্ন উঠবে, যারা এই কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত তাদের কী ক্ষমতাবানদের একাংশের সাথে যোগসাজশ রয়েছে, যারা তাদের সুরক্ষা দিতে তৎপর, না কী তারা প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান” টিআইবি মনে করে মাস্ক কেলেঙ্কারীসহ ইতোপূর্বে উত্থাপিত করোনা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনার যদি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হতো তাহলে হয়তোবা সরকারকে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুক্ষীন হতে হতো না।