নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। আবার এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। স্থানীয়রা একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে মান্দার গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে মুরব্বিদের হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পায়। এরপর থেকে এলাকা ছাড়া। কিন্তু তারপরেও দমেনি। এখনো বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় তার প্রতারণার গল্প।’ কথাগুলো বলছিলেন প্রতারক সিকদার লিটনের প্রতিবেশি সামীম শেখ। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামে বাড়ি তার। পাশের বাড়ির প্রতিবেশি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই চেনেন সিকদার লিটনকে। আর স্থানীয়দের কাছেও তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশি অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত। আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক শিকদারের ছেলে সিকদার লিটন। প্রতিবেশি সামীম শেখ বলেন, ‘এলাকা থেকে বিতারিত হবার পর পাবনা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গা অবস্থান করেছে এই প্রতারক। সেখানেও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এত অত্যাচার আল্লাহ সহ্য করলেও মানুষ সহ্য করে কেমন করে?’ ‘কিছুদিন আগে নড়াইল থেকে একজন মহিলা এসে কান্নাকাটি করছিল। পরে জানতে পেরেছি লিটন তাকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নিয়েছে। এমন অনেক খারাপ কাজে জড়িত লিটন।’ সামীম বলেন, স্থানীয় অনেক ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনায় সে জড়িত। আবার মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনায় অনেকে এখনো তার বাড়িতে আসে। বাবা-মা মারা যাবার পরেও দাফন করতে এলাকায় আসতে পারেনি।’ এদিকে একই এলাকার নাজমুল নামে এক যুবকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেন প্রতারক সিকদার লিটন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। আড়াইবছরে চাকরি তো দুরের কথা টাকাও ফেরৎ পাননি নাজমুল। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন ধর্না দিলেও এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। গরু বিক্রি ও কিছু জমি বন্ধুক রেখে লিটনের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন নাজমুল। বর্তমানে অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই যুবক। স্থানীয়রা বলছে, একবার তার হাতে টাকা গেলে সেই টাকা কেউ ফেরত পেয়েছেন এমন নজির নেই। এদিকে চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সাইবার অপরাধসহ এক ডজনের মতো মামলার আসামি প্রতারক লিটন ও তার পেছনে কারা কাজ করছে তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুরু হয়েছে তদন্ত। বিভিন্ন সময় লিটনের বিরুদ্ধে থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজ পৌঁছালেও সবসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে গেছেন এই প্রতারক। ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। পুলিশ বলছে, লিটনকে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও সম্মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ আছে সিকদার লিটন ও তার ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আকরাম হোসেন। যার নং- ৯৬। ফেসবুকে অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেনও সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই দুটো অভিযোগ তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় আছে পুলিশ। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর, খুলনা ও পাবনা জেলায় সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে এসব মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ। মামলা নং-২৪। চাঁদা দাবি এবং প্রাণনাশের হুমকির অপরাধে এই মামলা করা হয়। এছাড়া পাবনা জেলার আটঘরিয়ায় একটি সি.আর মামলার আসামিও সে। মামলার নং-৪৯/১৪। এই মামলাটি করা হয়েছে প্রতারণার অভিযোগে। পাবনার আমিনপুর থানাতেও করা প্রাণনাশের একটি মামলার আসামি লিটন। ২০১৪ সালের ১৮ মে মামলাটি করা হয়। অপকর্মের অভিযোগে ২০১৬ সালের ৯ মে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয় ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানায়। প্রতারক লিটনকে ধরতে পুলিশের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিমকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে এভাবে বেশিদিন পালিয়ে থাকতে পারবে না।’