স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, ‘মহাপরিচালক হবার আগে তিনি করোনা উপসর্গে অসুস্থ একজন সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে পারেননি। পরে সেই চিকিৎসক মারা যান। মহাপরিচালক জানান, ওই চিকিৎসকের কোভিডের সব উপসর্গ ছিল, কিন্তু তিনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন না। তাই দেশের হাসপাতালগুলোতে কোভিডের পাশাপাশি নন-কোভিড সার্ভিস চালু করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে।’
বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নথিসূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সেই সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদফতরের নব নিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কোভিড-১৯ এর জনস্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে অনলাইন সভায় এই অভিজ্ঞতার কথা জানান।
পরে সিদ্ধান্ত হয় একই হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড সার্ভিস চালু রাখতে হবে। সভায় অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকায় বড় বড় কিছু কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে গিয়েছে।’ ২৮ আগস্টের তথ্য অনুসারে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে অনেক শয্যা ফাঁকা থাকছে। তাই মাল্টি ডিসিপ্লিনারি হাসপাতালগুলোকে নন-কোভিড ঘোষণা করা যায় কিনা অথবা সীমিত আকারে কোভিড রেখে নন-কোভিড সার্ভিস চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে জানতে চান জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির কাছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মুগদা হাসপাতাল, হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে কোভিড রোগীর পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটি তারা বন্ধ রেখেছে। কেবলমাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড নন-কোভিড রাখা হচ্ছে।’
সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালক জানান, ‘তিনি যখন ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ছিলেন তখন তার অধীনেই দেশের আরেকজন সিনিয়র মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ভর্তি হন। তার কোভিড উপসর্গ ছিল কিন্তু তিনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন না। তার এন্ডোসকপি করার জন্য আমি ঢাকা শহরের এমন কোনও হাসপাতাল নাই যেখানে যায়নি, কিন্তু কাউকে রাজি করাতে পারিনি। সে চিকিৎসক পরে মারা যায়।’
সেই কথা মনে করেই তিনি বলেন, ‘কোভিডের পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে নন-কোভিড সার্ভিস চালু করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। পরে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কোভিড, নন-কোভিড, টেস্ট ও অ্যাসিম্পটোমেটিক (উপসর্গবিহীন) কেস বিবেচনা করে পরিকল্পনা করতে হবে। ট্রায়াজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি সার্ভিলেন্স এর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। একই হাপসাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড সার্ভিস চালু করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীরা ঘুরেও ভর্তি হতে পারেননি। রোগীদের ভোগান্তি তখন চরমে ওঠে। হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে নন-কোভিড রোগী মারা গেছেন এমন সংবাদ ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।