শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ফের উত্তপ্ত রাখাইন, মিয়ানমারের নয়া কৌশল

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২১৫ বার পঠিত

ডেস্ক: ফের অগ্নিগর্ভ রাখাইন। রাজ্যজুড়ে নতুন করে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মিয়ানমার। সীমান্ত এলাকাতেও তাদের সন্দেহজনক গতিবিধি বাড়ছে। ৩ বছর আগে (২০১৭ সালে) যেসব বিভ্রান্ত বৌদ্ধ যুবকদের সহায়তায় গণহত্যা, গণধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সমূলে উচ্ছেদ চেষ্টা চালিয়েছিল আজ সেই বৌদ্ধদের (মগ) টার্গেটে অপারেশন চালাচ্ছে মিয়ানমার আর্মি। তাদের টার্গেটে পরিবর্তন এলেও অশান্ত রাখাইন পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হিসেবেই থাকছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন পুরোপুরি খালি করতে নয়া কৗশল গ্রহণ করেছে মিয়ানমার। এতে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চীনা সংবাদ মাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বার্তা সংস্থা এপি’র বরাতে চলতি বছরের জুনে রাখাইন পরিস্থিতি এবং ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি সংক্রান্ত প্রথম রিপোর্ট করে।
সেই রিপোর্টে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণভাবে ‘রাখাইন খালি করার নির্দেশ’-এর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেই নির্দেশ প্রদানের সপ্তাহান্তে সেখানে ফের ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে বর্মি বাহিনী। বৌদ্ধ-মগদের অধিকার আদায়ে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রস্তুত তাদের সশস্ত্র গেরিলা ফোর্স আরাকান আর্মি দমনের নামে পরিচালিত ওই অপারেশনে বাছ-বিচারহীন আক্রমণ, প্রায় ৪০টি গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের কারণে ১০ হাজারের অধিক নারী-পুরুষ ক’মাসে বাস্তুচ্যুত হয়। আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে এবং সেই প্রেক্ষিতে তাদের নিধনে রাখাইনের স্থানীয় সরকার অধিবাসী গ্রামগুলো খালির নির্দেশ দেয় বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। স্থানীয় সূত্রের বরাতে আল-জাজিরাসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে গত ক’মাস ধরে নিয়মিতভাবে রাখাইন পরিস্থিতি এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বেশেষে হাজারও মানুষের বাস্তুচ্যুতি এবং দুর্দশার সিরিজ রিপোর্ট প্রচার হচ্ছে। অনলাইন আল-জাজিরার সর্বশেষ সাক্ষাৎকার ভিত্তিক রিপোর্ট বলছে, রাখাইন পরিস্থিতি এমন যে মরণঘাতী করোনার চেয়েও সেখানকার জনসাধারণ বেশি ভীত সম্প্রতি নিয়োগকৃত সেনাবাহিনীকে নিয়ে। রিপোর্টে উঠে এসেছে, রাখাইনে যখন তখন আকিস্মকভাবে গুলি চলে। গুলির শব্দে স্থানীয়দের রাতের ঘুম হারাম। টার্গেটকৃত গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর যে বর্বরতা হয়েছিল প্রায় অভিন্ন কায়দায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন রাতে গ্রামবাসীর ওপর বেপরোয়া গুলি চালাচ্ছে। বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ায় আশ্রয়হীন গ্রামবাসী নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে দিগ্বিদিক ছুটছেন। ঢাকার আশঙ্কা- পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে রাখাইনে অবশিষ্ট প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা এবং নির্যাতিত মগরা আন্তর্জাতিক সীমান্তে আশ্রয় খুঁজতে পারে। রাখাইন সংকট নতুন মাত্রা পেতে পারে। রাখাইন কনফ্লিক্টেরে বিদ্যমান বাস্তবতা এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্র সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা দিয়ে গত শুক্রবার ভোরে আচমকা হাজারও বর্মি সেনার সন্দেহজনক পারাপার, সীমান্তের অন্তত তিনটি পয়েন্টে সৈন্যদের উপস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ এবং প্রতিবাদ জানাতে ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে রোববার তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সন্দেহজনক এসব অপতৎপরতা বন্ধ করে দুই দেশের মধ্যকার ভুলবোঝাবুঝির অবসানে মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলে বাংলাদেশ। এ সময় একটি প্রটেস্ট নোটও রাষ্ট্রদূতের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার সেলের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেনের দপ্তরে রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। মিয়ানমার দেখভালকারী ঢাকার কূটনীতিকরা গতকাল জানিয়েছেন, সন্দেহজনক গতিবিধির মাধ্যমে রাখাইনে সেনা সমাবেশ দুই দেশের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করতে পারে। কারণ ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে গণহত্যা শুরুর প্রাথমিক পর্বে এভাবেই সেখানে সেনাদের জড়ো করেছিল মিয়ানমার। তাছাড়া ১১ই সেপ্টেম্বরের  সেনা সমাবেশের কারণে রাখাইনে এখন যেসব রোহিঙ্গা রয়েছেন, তাদের মধ্যে নতুন করে ভীতি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে কা নিউন ছুয়াং, মিন গা লার গি ও গার খু ইয়া -সীমান্তের এই তিন পয়েন্টে ট্রলার থেকে সৈন্যরা নেমেছে। এই পয়েন্টগুলোর মধ্যে অন্তত একটির দূরত্ব আন্তর্জাতিক সীমান্তের ২০০ মিটারের মধ্যে। সেদিন এক হাজারের বেশি সৈন্য সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে রাখাইনে প্রবেশ করেছে বলে ঢাকা ধারণা পেয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, রাখাইনে সেনা সমাবেশের একাধিক কারণ থাকতে পারে। সেনা উপস্থিতি বাড়িয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিতে পারে মিয়ানমার। তাছাড়া তিন-চার বছর ধরে, বিশেষ করে যারা ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা গণহত্যার অপারেশনে যুক্ত ছিল, তাদের সীমান্ত থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেয়ার জন্যও এটি হতে পারে। স্মরণ করা যায়, আইসিসিতে দুই সৈন্যের জবানবন্দি রেকর্ডের পর থেকে পুরনো সেনাদের রাখাইন থেকে ফেরত নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মিয়ানমার। নতুন করে আর যাতে কোনো সৈন্য পক্ষ ত্যাগ করতে না পারে, সে বিষয়ে তাদের নজর রয়েছে বলে রিপোর্ট মিলেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com