ক্যাম্পাস প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাবির অধীনে যায় এই সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অধিভুক্তির পর থেকেই সেশনজট নিরসন, পরীক্ষার দাবি, দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশসহ নানা দাবিতে বেশ কয়েকবার আন্দোলনে যায় শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুততম সময়ে তা সমাধানের আশ্বাস দিলেও এখনও তা চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সব ক্ষেত্রে তা এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩য় বর্ষের (২০১৫-১৬) সেশনের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত বছরের ২৬ নভেম্বর। একই সাথে পরীক্ষা দিয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফলাফল পেলেও হিসাববিজ্ঞান এবং ফিন্যান্স এই দুই বিভাগের ফলাফল এখনও প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে মোট ২৫টি বিষয়ে অনার্স করার সুযোগ আছে শিক্ষার্থীদের। চলমান এই ২৫টি বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছে তার মধ্যে ২৩টি বিভাগের ফলাফল ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাসেও কেন এই দুই বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হয়নি তার সঠিক উত্তর জানে না কেউ।
এছাড়া ২০১৮ সালের (২০১৪-১৫ সেশন) ৪র্থ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে ১৫ জানুয়ারি ২০২০। এই সেশনের ১৪টি বিভাগের ফলাফল প্রকাশিত হলেও এখনও বাকি ১১টা বিভাগের ফল প্রকাশ।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হিসাববিজ্ঞান ৪র্থ বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হলেও তৃতীয় বর্ষের ফল প্রকাশ না হওয়ার কারণে যার পূর্ববর্তী বছরের বিভিন্ন কোর্সে মানোন্নায়ন পরীক্ষা দিয়েছিল তারা ফলাফল সমন্বয়ের আবেদন করতে পারছেন না।
এসবের কারণে একই সাথে পরীক্ষা দিয়ে যাদের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তারা চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করতে পারলেও বাকিরা পারছে না। এতে অনেক শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
১০ মাস আগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক বিষয়ের ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়েছিলেন সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ত্বোহা। যার ফলাফল এখনো না হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীন তৃতীয় বর্ষের ইম্প্রুভ দিয়েছিলাম। এরপর চতুর্থ বর্ষ শেষ করে এখন শর্তসাপেক্ষে এমবিএ তে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখন ওই তৃতীয় বর্ষের ইম্প্রুভের ফলাফল না পাওয়ায় ফলাফল ঝুলে আছে। আমার সহপাঠীরা স্নাতক পাস করে বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করলেও আমার সমন্বিত রেজাল্ট না থাকায় আমি স্নাতক শেষ করেও কোথাও আবেদন করতে পারছি না। এসব বিষয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের কারণে অফিস বন্ধ থাকায় এত দিনেও ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন ঢাকা কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবির। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অফিসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় হয়তো ফলাফল প্রকাশ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছে দ্রুতই ফলাফল প্রকাশ করা হবে।’
সাত কলেজের ফোকাল পয়েন্ট ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, পরীক্ষা কমিটির কিছু কিছু শিক্ষক ঢাকায় নেই। দু-একজন শিক্ষকের জন্য হয়তো ফলাফল ঝুলে আছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়ে আমি ভিসি স্যারের সাথে কথা বলবো।
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরীকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘সাত কলেজের রেজাল্ট একের পর এক হইছে। করোনার মধ্যে তারা একটু স্যাক্রিফাইস করবে না’- এই বলে ফোন কেটে দেন তিনি।