বিএনএস সেন্টারের কিছু ভাড়াটিয়ার কারণে আমি ট্যাক্স দিতে পারছি না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনএস গ্রুপ অব কোম্পানীজের চেয়ারম্যান, দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের প্রকাশক, দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা এম.এন.এইচ. বুলু।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উত্তরা বিএনএস সেন্টারে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া না পেয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় এম.এন.এইচ. বুলু বলেন, অনেক শিল্পপতি আছেন যারা সরকারের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নিয়েছেন। বাড়ি করেছেন কানাডা, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে।
অনেকে সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছেন না। আমি তো তাদের মতো না। আমি নিয়মিত ট্যাক্স দিয়ে আসছি। তবে এই বিএনএস সেন্টারের কিছু ভাড়াটিয়ার কারণে আমি এখন ট্যাক্স দিতে পারছি না। বিএনএস সেন্টারের ৭ জন ভাড়াটিয়া আমাকে দুই কোটি ১৫ লাখ টাকা ভাড়া দিচ্ছে না।
আমাদের চুক্তিপত্রে ‘ক্লোজ নাম্বার সেভেন’-এ ক্লিয়ার বলা আছে, দুই মাস ভাড়া না দিলে আমরা যেকোনো সময় লাইন বিচ্ছিন্ন করতে পারি। এই ভাড়াটিয়ারা নিজেদের মগের মুল্লুক মনে করে আমার ভাড়া দিচ্ছে না। এম.এন.এইচ. বুলু আরো বলেন, আমি বারবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করছি। তবে তারা প্রতিবারেই আমার ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডের বিদ্যুতের গেট ভেঙে লাইন সংযোগ দেন।
আমি আবার আজ (মঙ্গলবার) নিজে থেকে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন করলাম। আগামী তিন দিনের মধ্যে তারা যদি টাকা পরিশোধ না করে তাহলে আমি ট্যাক্স অফিসকে জানিয়ে দেব। তারাই (ট্যাক্স অফিস) ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা এম.এন.এইচ. বুলু আরো বলেন, এবিকো ইন্ডাস্ট্রিজের এটা একটি প্রতিষ্ঠান। রাজউকের কাছ থেকে অকশনে এবিকো ইন্ডাস্ট্রিজের নামে এই ভবন কেনা হয় প্রায় ১৬-১৭ বছর আগে। আইন হলো ভাড়ার টাকা থেকে ট্যাক্স প্ররিশোধ করতে হয়। আমি ভাড়ার জন্য ট্যাক্স দিতে পারছি না। রাজউক আমাদের পরপর তিনটি নোটিশ দিয়েছে।
১০ ফুট করে ভবনের চারপাশে ছাড়তে হবে। কিছুদিন আগে রাজউক ও সিটি করপোরেশন সিঁড়ি ভেঙেছে। এম.এন.এইচ. বুলু বলেন, পরে আমরা লাইন কেটেছি। এ সময় তারা হামলা করলে আমার লোক আহত হয়। বিষয়টি নিয়ে আমি মামলা করেছি। তদন্ত হয়েছে। এরপরও একাধিকবার আমরা লাইন বিচ্ছিন্ন করেছি। প্রতিবারই তারা লাইন সংযোগ দিয়েছে, আমাদের নতুন তালা ভেঙে ফেলছে।
সময়ে সময়ে তালা দিয়েছি, ওরা তালা ভেঙেছে, এরপর আমরা ভাঙা তালার ছবি তুলেছি। সে ছবি আমাদের কাছে প্রিন্টআউট আছে। আপনারা জানেন আমার কাছে সরকার ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ট্যাক্স পাবে। আমাকে ট্যাক্স অফিস থেকে বলা হচ্ছে, যারা ভাড়া না দিচ্ছে ওদের অ্যাকাউন্ট অ্যাটাচমেন্ট করবে। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য অ্যাটাচমেন্ট করবে। আমি তাদের বলছি, দেখেন আমি তাদের সাথে কথা বলে দেখছি। আপনারা জানেন করোনাকালে এটিবি’র ব্যবসা চলে না।
তারপরও আমরা আমাদের নিজস্ব পকেট থেকে সরকারকে ট্যাক্স পরিশোধ করেছি। আমি তো সরকারের ইলেকট্রিসিটি বিল পরিশোধ করা বন্ধ করতে পারছি না। অথচ ভাড়াটিয়ারা আমাকে বিল দিচ্ছে না। আমার এক কর্মচারী কামরুল ভাড়াটিয়াদের সাথে যোগসাজশ করে জালিয়াতি করেছে। আমার তিনটা প্রতিষ্ঠান থেকে ৭০ লাখ টাকা প্রতিমাসে কামরুল প্রতারণা করে মেরে দিয়েছে। ভাড়া ওঠে না বলে সেটা কামরুল লুকিয়ে রাখে। কিছুদিন আগেই ব্যবসায়ীরা আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল। আমি এখানে আসলে নাকি আমাকে মেরে ফেলা হবে। এম.এন.এইচ. বুলু বলেন, আমি আসলে গত ২৭ মার্চ থেকে অফিস করছি না। আমি আসলে মানসিকভাবে ভারাক্রান্ত। গতকালও আমাকে ট্যাক্স অফিস থেকে বলা হয়েছে।
গত পরশুদিন আমাকে ‘ট্যাক্স কমিশন’ বলেছেন- ট্যাক্স কবে দেবেন? তখন আমি তাদেরকে বলেছি- আমি সরকারকে ট্যাক্স দিতে বাধ্য। রক্ত বিক্রি করে হলেও আমি সরকারকে ট্যাক্স দিব। তবে আমি তাদের বলেছি যদি আমাকে ভাড়া না দেয়া হয়, আমি যদি ভাড়া না পাই তবে কিভাবে ট্যাক্স দেব। এসময় ট্যাক্স কর্মকর্তা আমাকে বলেন, আপনি আমাদেরকে অনুমতি দেন- আমরা তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ তাদের অ্যাকাউন্ট অ্যাটাচমেন্ট করে দেবো। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আমি ট্যাক্স কর্মকর্তাদের বলেছি, আমি শেষবারের মতো চেষ্টা করছি। তাই আপনাদের উপস্থিতিতে পুনরায় লাইন বিচ্ছন্ন করলাম। উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনএস গ্রুপ অব কোম্পানীজের চেয়ারম্যান এম.এন.এইচ. বুলু বলেন, আমি একাধিকবার তাদের কাছে উকিল নোটিশ দিয়েছি।
পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছি। তবে কোনো কাজই হচ্ছে না। তবে পুলিশ আন্তরিকভাবে সহায়তা করছে। এদের মাঝে কেউ কেউ আছেন যারা সাবলেট ভাড়া দিয়েছেন। আমার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সাবলেট অন্য কাউকে দিয়েছেন। আমাকে প্রতি মাসে দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দেন। আর সাবলেটের কাছ থেকে নেন চার লাখ ৪০ হাজার টাকা। তারা সাবলেট ভাড়া দিয়ে দুই লাখ টাকার উপরে এক্সট্রা ইনকাম করে অথচ আমার ভাড়া দিচ্ছেন না।
যে কারণে আমি সরকারকে ট্যাক্স পরিশোধ করতে পারছি না। এম.এন.এইচ. বুলু বলেন, আমাদের কিছু শিল্পপতি আছেন যারা, সারকারি ও বেসরকারি ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন নেন। এরপর তারা কানাডা, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বাড়ি করছেন। মনে করেন এই টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হবে না। আমি তো সরকারকে ট্যাক্স দিতে চাই। যাই হোক আমি অসুস্থ। আমার হাত-পা কাঁপছে। আমি সরকারকে ট্যাক্স দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আমি শেষবারের মতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি এখন লাইন ডিসকানেক্ট করেছি। আগামী তিন দিনের মধ্যে তারা যদি ট্যাক্স পরিশোধ না করে ট্যাক্স অফিস পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইন হলো আপনি যে ভাড়া পাবেন সে ভাড়া থেকে ট্যাক্স পরিশোধ করবেন। অন্যদিকে রাজউক আমাদেরকে পরপর তিনটা নোটিশ করেছে। বিল্ডিংয়ের পিছন সাইড থেকে এবং সামনে থেকে দশ ফিট করে ভাঙতে হবে। এতে প্রায় ১০টি করে দোকান ভাঙা পড়বে। তবে আমি বিভিন্নভাবে রাজউককে চিঠিপত্র দিয়ে যাচ্ছি। রাজউক বলছে আপনারা যদি ভেঙে না দেন আমরা ভেঙে দেবো। কিছুদিন আগে তারা অন্যায়ভাবে সিঁড়ি ভেঙে দিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনও ভেঙেছে। আমি এদের