আবারও বাজিমাত করল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। বিধানসভার নির্বাচনে ২১০টির বেশি আসন পেয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় দিদি। নির্বাচনে ৫০ ভাগ ভোট পড়েছে নারীদের। জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে তারাই ভূমিকা রেখেছেন বলে জানান খোদ মমতা। ৭৫টির বেশি আসনে জিতে বিরোধী দল এবার বিজেপি। এদিকে, দিনভর নাটকীয়তার পর মমতার আসন নন্দীগ্রামে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে জয়ী ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
এ জয় বাংলার জয়, এই জয় বাংলার মানুষের জয়- বিধানসভা নির্বাচনে হ্যাট্রিক জয়ের পরই নবান্নে সমর্থকদের সামনে হাজির হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন সে কথাই। সবাইকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তৃণমূল নেত্রী।
বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের জন্য ১৪৮টি আসন প্রয়োজন থাকলেও মমতার দল জয় পায় ২১০টির বেশি আসন। অন্যদিকে বিরোধী দল বিজেপি পায় ৭৫টির বেশি আসন। তবে ভরাডুবি হয়েছে বাম-কংগ্রেস জোটের।
ভোট গণনার দিন, শুরু থেকেই নানা ধরনের নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আলোচিত নন্দিগ্রাম আসনে। কখনো এগিয়ে থাকেন মমতা আবার কখনো বা বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তবে রোববার সন্ধ্যার পর বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দুকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এর কিছু পরই আবার স্থগিত করা হয় ফলাফল। তবে নানা জল্পনা-কল্পনার পর শুভেন্দুকেই চূড়ান্তভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
রাজ্যটিতে গত ২৭ মার্চ থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত আট দফায় ভোট হয় ২৯২টি আসনে। করোনায় দুজন প্রার্থী মারা যাওয়ায় দুটি আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ২ তারিখের পর দিদি আপনি প্রাক্তনি হয়ে যাবেন। এমন কথা বলার পরও জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
অন্যদিকে, ৩৪ বছর শাসন করে ২০১১ সালের পর গত এক দশকে কোনও রকম অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখলেও একুশের ঝড়ে একেবারেই নিশ্চিহ্ন বামফ্রন্ট-কংগ্রেস। আর ক্ষমতায় যাওয়ার গভীর আত্মবিশ্বাস দেখালেও শেষ পর্যন্ত বিরোধী আসনেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বিজেপিকে। পরাজয়ের কারণ খুঁজতে গেরুয়া শিবিরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্য নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি, কোভিড অব্যবস্থাপনা, সরকারি প্রকল্প থেকে কমিশন গ্রহণ, সারদা, নারদার মতো কেলেঙ্কারির ঘটনা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়য়ের বিরুদ্ধে বিজেপির বড় অস্ত্র। এ ছাড়াও প্রবল ধর্মীয় মেরুকরণের মতো রাজনৈতিক হাতিয়ারও ছিল বিজেপির বড় চমক।
তবে বিজেপির সব অস্ত্রকে ভোঁতা করে নির্বাচনে বাজিমাত করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মানুষের মনের মতো কিছু প্রকল্পের কারণে পেয়েছেন সাধারণের ব্যাপক সমর্থন। এর মধ্যে ছিল স্বাস্থ্যসাথী, সবুজসাথীর মতো কিছু প্রকল্প। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে বাংলা তার নিজের মেয়েকে চায়- এই স্লোগান তুলে মমতা দল যে প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন, তাতেও ছিল পশ্চিমবঙ্গের নারীদের বাড়তি সমর্থন।
আর ২০১১ সালে গো-হারা হয়ে বামফ্রন্ট সমর্থকরা মমতার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঢালাওভাবে ভোট দিয়েছেন। সেই বামফ্রন্ট এবার হিন্দুত্ববাদী বিজেপিকে আটকাতেই ঢালাওভাবে তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার ফলেও তৃণমূলের কাছে এ জয়ের রাস্তা তৈরি হয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন। যদিও এবার তারা বিধানসভার একটি আসনও না পেয়ে রাজনৈতিক ভাবে চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
অন্যদিকে ২০০ আসনে জয় নিয়ে তৃণমূলকে হটিয়ে বাংলার মসনদে বসার যে আত্মবিশ্বাসের ঢেকুর তুলেছিলেন বিজেপি, তাদের খুশি থাকতে হচ্ছে মমতার বিরোধীদলের চেয়ার নিয়েই।