ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোনায়েম খানসহ সব নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা এই মামলাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ও দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ করেছেন। সেই সঙ্গে, উপজেলার পবনবেগ গ্রামে সেকেন্দার আলম শেখের ওপর হামলার ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।
রবিবার বেলা ১১ টায় গোপালপুর বাজারে এক মানববন্ধনে এই দাবি তোলেন তারা। মানববন্ধনে আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ, গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশ নেন।
গত ৬ মে সন্ধ্যায় গোপালপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সেকেন্দার আলম শেখের ওপর উপজেলার পবনবেগ এলাকায় সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই হামলার ঘটনায় সেকেন্দার আলম বাদি হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় মোনায়েম খানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাতজন নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। সেকেন্দার আলম স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক।
কর্মসূচিতে বক্তারা সেকেন্দার আলম শেখের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। সেই সঙ্গে, প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তবে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম সোজা বলেন, ‘সেকেন্দারের ওপর হামলাকারী প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চত করা হোক। কিন্তু যারা নিরাপরাধ, নিরীহ ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে এই মামলায় আমরা বিস্মিত। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ বলে আমরা মনে করছি। এই মামলা প্রত্যাহারের জোরাল দাবি জানাচ্ছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, তারা যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করবেন এবং তাদের আইনের আওতায় আনবেন।’
সাংবাদিক সেকেন্দারের ওপর হামলার দোষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন তারা বলেন, ‘সেকেন্দারকে বলব, কার ষড়যন্ত্রে, কার কথায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছ। এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করো। যারা তোমার ওপর সত্যি আক্রমণ করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে আমরা তোমার পাশে আছি। যদি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করা হয়, অন্যায়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর কোন রকম চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করা হয়, তাহলে আলফাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ বসে থাকবে না। তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এক সপ্তাহের মধ্যে সঠিক তদন্ত করে যারা এরসাথে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। যারা জড়িত নয় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন। তাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের এভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘায়েল করা যাবে না। প্রকৃত ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে তারা আবারো এমন ঘটনা ঘটাবে।’
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সুন্দরভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। কিন্তু এটিকে নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। সবাইকে এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।’
মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইকবাল হাসান চুন্নু বলেন, ‘এই ঘটনার সত্য বের করতে হবে। যারা প্রকৃত দোষী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এর পরিণাম কিন্তু বেশী ভালো হবে না। প্রত্যেকে সতর্ক হয়ে যান।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, ‘সাংবাদিক সেকেন্দার আলমের ওপর যারা অহেতুক হামলা করেছে তাদের বিচার চাই। তবে যারা প্রকৃত দোষী তাদেরকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হোক; আর যারা নির্দোষ তাদেরকে এজাহার থেকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে।’
গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা সুজা মিয়ার সভাপতিত্বে ও সহ-সভাপতি খান আমিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন, গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, গোপালপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কবীর মিয়া, সাধারণ সম্পাদক জামাল সরদার, ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইনামুল হাসান, ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা খান নবাব আলী, আব্দুল বাতেন মিয়া, গোপালপুর ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তা বেগম, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক বিউটি বেগম প্রমুখ।