ভ্রমণ ডেস্ক : বিশালাকার এক জমিদার বাড়ি। ঢাকা থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরেই এই জমিদার বাড়ির অবস্থান। খুবই নান্দনিক এবং কারুকার্যপূর্ণ এই জমিদার বাড়ি দেশের অন্যতম এক ঐতিহ্যের সাক্ষী। এটি মুড়াপাড়া রাজবাড়ি নামে পরিচিত।
নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রূপগঞ্জ উপজেলার মুরাপাড়ায় অবস্থিত এই দৃষ্টিনন্দন রাজবাড়ি। বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও শতবর্ষী জমিদার বাড়ি। বিভিন্ন সময় এ জমিদার বাড়িটি কয়েকজন জমিদার কর্তৃক সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। স্থানীয়রা একে মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি বলেও অভিহিত করে।
মুড়াপাড়া রাজবাড়িটি ৬২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। দ্বিতল এ জমিদার বাড়িতে শতাধিক কক্ষ আছে। এ ছাড়াও রাজবাড়ি সংলগ্ন ২টি পুকুর, বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার ও কাচারি ঘর আছে। রাজবাড়ির মন্দিরের ওপরের চূড়াটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু। মূল প্রাসাদে প্রবেশের পথে আছে বেশ বড় একটি ফটক। একটি আম বাগানও আছে জমিদার বাড়ির পাশে। এ ছাড়াও দু’টি পুরনো মঠ আছে প্রধান সড়কের পাশে।
জানা যায়, ১৮৮৯ সালে জমিদার রাম রতন ব্যানার্জী এই বাড়িটির নির্মাণ শুরু করান। আর এই জমিদার বাড়ির কাজ শেষ করেন তার নাতি জগদিস চন্দ্র ব্যানার্জী। ১৯০৯ সালে বাড়িটি সম্পন্ন হবার পর এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তি জগদিস চন্দ্র ব্যানার্জী নিজেই একজন জমিদার হয়ে উঠেন।
তিনি ছিলেন দিল্লির দুই বারের নির্বাচীত কাউন্সিলর। প্রজাদের সুযোগ-সুবিধার জন্য তিনি অনেক কিছুই নির্মাণ করেছিলেন। তবে শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যাধিক কঠোর ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির। প্রজারা খাজনা পরিশোধ না করলে, ধরে চুল-দাড়ি কেটে দিতেন। অবাধ্য প্রজাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতেন।
এই জমিদার বাড়ি তৈরি করেন বাবু রামরতন ব্যানার্জী। যিনি ওই অঞ্চলে মুড়াপাড়া জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরপর তার কয়েকজন বংশধর কর্তৃক প্রাসাদটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে জমিদার প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী এই ভবনের পিছনের অংশ সম্প্রসারণ করেন।
তিনি পরিবার নিয়ে সেখানেই বসাবাস শুরু করেন। তার পুত্র বিজয় চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রাসাদের সামনের অংশে একটি ভবন নির্মাণ ও ২টি পুকুর খনন করেন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তার দুই পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী ও আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী কর্তৃক প্রাসাদের দোতালার কাজ সম্পন্ন হয়।
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর জগদীশ চন্দ্র তার পরিবার নিয়ে কলকাতা গমন করেন। এরপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাড়িটি দখল নেয় এবং এখানে হাসপাতাল ও কিশোরি সংশোধন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু করে।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এখানে স্কুল ও কলেজের কার্যক্রম পরিচালনা করা হত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর এই রাজবাড়ির দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর থেকে এই বাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ নামে পরিচিত।
ছুটির দিনগুলোতে বিশাল এই জমিদার বাড়ির রূপ দেখতে হাজির হন দর্শনার্থীরা। যদিও করোনা মহামারির কারণে দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখন বন্ধ; তাই আপাতত বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অবশ্যই ঢাকার অদূরের এই চমৎকার রাজবাড়িতে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন।
যেভাবে যাবেন মুড়াপাড়া রাজবাড়ি : ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এবং যাত্রাবাড়ী থেকে বেশ কয়েকটি নারায়ণগঞ্জগামী বাস আছে। এ ছাড়াও নরসিংদী-ভৈরবগামী যেকোনো বাসে করে রুপসি বাসস্ট্যান্ড যেতে হবে। জনপ্রতি ভাড়া পরবে ৩০-৪০ টাকা। বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা অটোতে করে যাওয়া যাবে রাজবাড়িতে। ভাড়া পরবে জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা।