ধর্ম ডেস্ক : ‘আল্লাহ যেদিন আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন সেইদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত।’ কুরআনুল কারিমের সুরা তাওবার এ ঘোষণায় সন্মানিত ৪ মাসের একটি জিলহজ মাস। এ মাসের মর্যাদা ও ফজিলতের অন্যতম কারণ আশারায়ে জিলহজ বা প্রথম ১০দিন। এ দশকে অনুষ্ঠিত হয় হজ এবং কুরবানি। পবিত্র জিলহজ মাসের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও করণীয় তুলে ধরা হলো-
জিলহজ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
১. হজরে মাস জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে এ মাসের মর্যাদাপূর্ণ প্রথম ১০ রাতের কসম করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَ الْفَجْرِۙ وَ لَیَالٍ عَشْرٍ ‘শপথ ফজরের; শপথ দশ রাতের’। (সুরা ফজর : আয়াত ১-২)
রইসুল মুফাসসিরিন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং মুজাহিদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিসহ অনেক সাহাবা, তাবেঈ ও মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে ‘দশ রাত’ দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ রাতকেই বুঝানো হয়েছে।’ (ইবনে কাছির)
২. অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖمَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِ
‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৮)
৩. হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে নেক আমল করার চেয়ে বেশি প্রিয় আল্লাহর কাছে আর কোনো আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ওই ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদে বের হয়ে গেল অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না।’ (বুখারি, তিরমিজি)
৪. হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এ দিনের তুলনায় আল্লাহর কাছে কোনো দিন অধিক প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা। সুতরাং তাতে তোমরা বেশি করে তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পাঠ কর।’ (তাবরানি)
৫. হজরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহমাতুল্লাহি আলাইহির অভ্যাস ছিল, যখন জিলহজ মাসরে প্রথম দশ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার উপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন।’ (দারেমি)
৬. হজরত ইবনে হাজার আসকালানি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ;জিলহজ মাসের ১০ দিনের ফজিলতের তাৎপর্যের ক্ষেত্রে যা স্পষ্ট, তা হচ্ছে এখানে মূল ইবাদতগুলোর সমন্বয় ঘটছে। অর্থাৎ নামাজ, রোজা, দান-সদকা ও হজ; যা অন্যান্য সময় আদায় করা হয় না।’ (ফাতহুল বারি)
৭. ইসলামিক স্কলারগণ বলেছেন: জিলহজ মাসরে ১ম ১০ দিন সর্বোত্তম দিন, আর রমজান মাসের শেষ দশ রাত, সব চেয়ে উত্তম রাত।
জিলহজ মাসের করণীয়
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল, জিলহজের ১০ দিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই। তবে ঐ ব্যক্তি যার চেহারা ধুলিযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ শাহাদাত লাভ করেছে।’ (মুসনাদে বাযযার, মুসনাদে আবু ইয়ালা)
সুতরাং জিলহজ মাসের করণীয় হলো-
১. নখ-চুল না কাটা।
২. রাত জেগে বেশি বেশি জিকির-তাসবিহ করা।
৩. প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা।
৪. আরাফার দিন অর্থাৎ ৯ জিলহজ রোজা রাখা।
৫. তাকবিরে তাশরিক পড়া।
৬. কুরবানি করা।
৭. ঈদুল আজহার নামাজ পড়া।
৮. ঈদ ও আইয়ামে তাশরীকে রোজা না রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের করণীয়গুলো যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।