কুমিল্লার বিতর্কিত নুসরাত জাহান তানিয়াকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড। গত বুধবার ব্যাংকটির মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান আহসান উল্লাহ খানের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরআগে একই অভিযোগে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল নুসরাতকে।
নুসরাত পদ্মা ব্যাংকের চকবাজার শাখায় ঋণ বিভাগে মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ’ হিসাবে কর্মরত ছিল।
জানা গেছে, গত বুধবার নুসরাতের ব্যাংকে চাকরির আড়ালে গ্রাহকদের ফাঁদে ফেলে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগে দেশের প্রথমসারির বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঐদিনই ব্যাংক সংবাদটির সত্যতা তদন্তে নামে। তদন্তে নুসরাতের দেহ ব্যবসাসহ গ্রাহকদের ব্ল্যাকমেইল করার প্রমাণ পায় ব্যাংক। এ কারণে ঐদিনই নুসরাতকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় পদ্মাব্যাংক। যদিও ব্যাংকের অফিসিয়াল চিঠিতে বলা হয়েছে দায়িত্বে অবহেলা ও পারফরম্যান্স ভালো না থাকায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে নুসরাতের বরখাস্তের মুল কারণ অবৈধ দেহ ব্যবসা ও অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বলে পদ্মা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদ্য বরখাস্ত হওয়া নুসরাত জাহান পদ্মা ব্যাংকের আগে চাকরি করতেন ডাচ বাংলা ব্যাংকের কুমিল্লা ঝাউতলা শাখায় মার্কেটিং অফিসার হিসেবে। ডাচবাংলা ব্যাংকের ওই সময়ের সহকর্মী মো. শাহীনের সাথে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কিছু দিন পর নুসরাতের এসব বিষয় জানাজানি হলে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার নুসরাতকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। তখন নুসরাত ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার ও শাহীনের নামে ধর্ষণের মামলা করতে থানায় যান। কিন্তু নুসরাতের ছলচাতুরি বুঝতে পেরে মামলাটি গ্রহণ করেনি থানা। এরপরও থেমে থাকেনি নুসরাত। থানায় ব্যর্থ হয়ে আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, নুসরাত সাজানো এ মামলা পরিচালনায় নিয়োগ করেছিলেন কুমিল্লার একজন আইনজীবীকে। পরে ব্যাংকের ম্যানেজার এবং ওই সহকর্মীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মামলার আপোষ মীমাংসা করেন নুসরাত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডাচ বাংলা ব্যাংকের কমিল্লার শাখার একাধিক কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘নুসরাতের কেলেংকারির শেষ নেই। অফিসের ক্লাইন্ট আর সহকর্মী কেউ তার অপকর্ম থেকে রেহাই পাননি। অনেকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। আর দুবর্লতার সুযোগ নিয়ে গোপনে ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করেন। গোপনে ধারণ করা ফুটেজ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নুসরাত। এ বিষয়ে ব্যাংকে একাধিক অভিযোগ জমা হলে ডাচ বাংলা থেকে নুসরাতকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অপর আকে কর্মকর্তা বলেন, ‘কুমিল্লার কান্দিরপাড় এলাকার একজন গ্রাহককে জিম্মি করে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন নুসরাত। শুধু এই নুসরাতের কারণে ব্যাংকের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছিল।
নুসরাতের সাবেক চাকরিস্থল ডাচ বাংলা ব্যাংকের ঝাউতলা শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, নুসরাত মার্কেটিংয়ে চাকরির আড়ালে মূলত বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করতো। এটি জানাজানি হলে আমাদের ব্যাংক থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নুসরাত জাহান তানিয়া নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সুন্দরী মেয়েদের টাকার লোভ দেখিয়ে দৈহিক ব্যবসায় নিয়ে আসেন। প্রথমে নিজেই সম্পর্ক সৃষ্টি করে পরে ব্যাংকের ক্লায়েন্টসহ সেসব ব্যক্তির কাছে বিভিন্ন মেয়েকে পাঠায় সে। বিনিময়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা।
কুমিল্লা শহরের বাগিছাগাঁও এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান জানান, নুসরাত তার কলেজপড়ুয়া আত্মীয়কে ব্যাংকের ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ আছে বলে বাগিছাগাঁওয়ের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে ওই মেয়েকে টাকার লোভ দেখিয়ে অচেনা এক পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন। এরপর থেকেই ওই মেয়েকে এ কাজে একাধিক পুরুষের প্রয়োজনে নিয়মিত ব্যবহার করছেন নুসরাত।