নিজস্ব প্রতিবেদক : বছরের শুরুতে টিকা নিতে আগ্রহী বেশি মানুষ পাওয়া যায় কি না, সেই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে টিকাগ্রহীতার বয়স ৫৫ থেকে দ্রুত কমিয়ে আনা হয়েছিল ৪০ বছরে। কিন্তু ধীরে ধীরে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় আগে টিকা নিতে যাঁরা অনাগ্রহী ছিলেন, তাঁরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন টিকাকেন্দ্রে। ফলে অনেক জায়গায় ঘটছে বিশৃঙ্খলা, বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা।
আবার নিবন্ধন করার তিন-চার সপ্তাহ বা এক মাস পরও টিকা নিতে পারছেন না অনেকে। টিকা নেওয়ার এসএসএম পাওয়ার জন্য কাউকে কাউকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দিনের পর দিন। নিবন্ধন করে টিকার অপেক্ষায় রয়েছেন এক কোটির বেশি মানুষ। বিশেষ করে ঢাকার বড় সাতটি টিকাকেন্দ্রে হাজার হাজার মানুষ কয়েক সপ্তাহ আগে নিবন্ধন করেও এসএমএস না পাওয়ায় অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। আবার তাঁরা এসএমএস ছাড়াই কেন্দ্রে গেলেও পাচ্ছেন না টিকা। বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগও। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থায় পুরনো নিবন্ধনকারীদের টিকা দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকার ওই সাত হাসপাতাল হলো কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই হাসপাতালগুলোতে টিকা প্রদানে বিদেশগামীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ নিবন্ধনকারীদের অনেককে এসএমএস পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার মুন্নী কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন গত ৮ জুলাই। ৩৩ দিন পার হয়েছে; গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত তিনি এসএমএস পাননি। জিগাতলার বাসিন্দা লুত্ফুন নাহারও নিবন্ধন করেছেন গত ৮ জুলাই, গতকাল বিকেল পর্যন্ত তিনিও এসএমএস পাননি। শুধু মুন্নী বা লুত্ফুন নাহারই নন, তাঁদের মতো আরো বহু উদাহরণ রয়েছে, যাঁরা কেউ এক সপ্তাহ, কেউ দুই সপ্তাহ, কেউ তিন সপ্তাহ, কেউ বা চার সপ্তাহ আগে নিবন্ধন করেও এখনো এসএমএস পাননি।
কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে এই সমস্যার সহজ কোনো পন্থা বের করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেরই কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেছেন, নিবন্ধন করেও যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন, প্রয়োজনে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের বর্ধিত কোনো উপকেন্দ্র তৈরি করে সেখানে টিকা দেওয়ার সুযোগ করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু কেন সেটা করা হচ্ছে না, তা-ও অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এমনকি কারো কারো মতে, গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া বিশেষ ক্যাম্পেইনের আওতায় আগের জমা থাকা নিবন্ধনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া উচিত ছিল। কারণ আগে নিবন্ধন করে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও অনেকে টিকা পাচ্ছেন না, অথচ হঠাৎ করেই কেন্দ্রে এসে একেকজন তাৎক্ষণিক নিবন্ধন করে টিকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন, এটা মোটেই যৌক্তিক কোনো পরিকল্পনা হতে পারে না।
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, টিকার মজুদে সংকট থাকায় নিবন্ধনধারীদের অল্প অল্প করে ছাড়া হচ্ছে। টিকা এসে গেলেই সবাই টিকা পেয়ে যাবেন।
মন্ত্রী এ সময় জানান, আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যেই কোভ্যাক্স, চীনের উপহার ও সিনোফার্ম থেকে কেনা টিকার অংশবিশেষ নিয়ে মোট ৫৪ লাখ টিকা দেশে আসবে। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে আরো ছয় কোটি ডোজ টিকা কেনার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে আছে। আগামী মাসে আরো দেড় কোটি ডোজ টিকা আসবে, পরের মাসে আসবে প্রায় আড়াই কোটি ডোজ। এর পরের মাসে আসবে বাকিটা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা টিকার মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি; কারণ কখনো কোনো সোর্স থেকে সময়মতো টিকা না পেলে যাতে সমস্যা না হয়।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে আঠারো-ঊর্ধ্ব যে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়ার টার্গেট সরকারের রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ২২ শতাংশের নিবন্ধন হয়েছে গতকাল পর্যন্ত। ১১ শতাংশ এরই মধ্যে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। দুই ডোজ পূর্ণ করেছেন ৪ শতাংশ।
গত শনি ও রবিবার দুই দিনে মোট টিকা দেওয়া হয়েছে ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৪০ ডোজ। গতকাল এক দিনে টিকা নিয়েছেন ছয় লাখ ৩১ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন চার লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৪১ জন। সে হিসাবে গত তিন দিনে দেওয়া হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ৪২২ ডোজ টিকা। সব মিলে দেশে টিকা দেওয়া হয়েছে এক কোটি ৯১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ ডোজ।