নিজস্ব প্রতিবেদক : চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠা ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে তদন্তে মাদকের সঙ্গে এজাহারনামীয় তিন নারী আসামির সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।
শনিবার (১৪ আগস্ট) আদালতের বিমানবন্দর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ফরিদ আহম্মেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ চার্জশিট দেয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে আদালতে স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চার্জশিটের কোনো কার্যক্রম হয়নি।
আসামি নাসির ও অমির বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ (১) এর টেবিল ২৪ (ক), ১০ (ক) এবং ৪১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বর্তমানে নাসির জামিন রয়েছেন। তবে অমি কারাগারে আটক রয়েছেন। অভিযোগপত্রে অব্যাহতি দেওয়া তিন আসামি হলেন- লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও হুমকির অভিযোগে সাভার মডেল থানায় পরীমনি বাদী হয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অমিসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর একইদিন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্বর সেক্টরের-১২ নম্বর রোডের বাসা থেকে নাসির-অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তখন সেখান থেকে এক হাজার পিস ইয়াবা ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সিকদার। এরপর এ মামলায় গত ১৫ জুন আদালত ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এছাড়াও অপর তিন আসামি লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত ৩০ জুন বিমানবন্দর থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় নাসির উদ্দিনসহ অপর তিন আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত নাসিরসহ চার জনের পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন।
নাসির উদ্দিন মাহমুদ নাসির ইউ মাহমুদ নামেই পরিচিত। চার দশক ধরে আবাসন ব্যবসায় যুক্ত নাসির ঢাকা বোট ক্লাবেরও সদস্য। তিন দফায় উত্তরা ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এ ছাড়া এই ব্যবসায়ী জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি বোট ক্লাবে পরীমণি কাণ্ডে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। এদিকে অপর আসামি অমিও ক্লাবপাড়ায় একজন পরিচিত মুখ। আশকোনায় তার মালিকানাধীন ‘সিঙ্গাপুর ট্রেনিং সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের আড়ালে নারী পাচার করে প্রচুর অর্থ উপার্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কথিত আছে, বিত্তশালী ও তাদের বখে যাওয়া সন্তানদের বিপথে নিতে অমির জুড়ি নেই।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বনানী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় দুই দফা রিমান্ড শেষে পরীমনি কারাগারে আটক রয়েছে। গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। তার ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিংরুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।