মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

যেসব কারণে গিবতের অপরাধ ক্ষমা হয় না

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১
  • ১৩৮ বার পঠিত

ধর্ম ডেস্ক : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘গিবত যদিও জবানের গুনাহ কিন্তু এটা জেনা-ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক অপরাধ। সাহাবায়ে কেরাম এ কথা শুনে আশ্চর্য হলেন; গিবত কীভাবে জেনার চেয়ে মারাত্মক! তারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! গিবত কীভাবে জেনার চেয়েও মারাত্মক গুনাহ? নবিজি বললেন, মানুষ জেনা করে, পরে তওবাও করে; আল্লাহ তাআলা তাকে (জেনাকারকে) মাফ করে দেন। কিন্তু গিবতকারীর ক্ষমা তখন পর্যন্ত করা হয় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত যার গিবত করা হয়েছে, সে মাফ না করবে।’ (বায়হাকি, মেশকাত)

হাদিসের আলোকে গিবতের অপরাধ ও গুনাহ মারাত্মক। শয়তানই মানুষকে এ অপরাধে দিকে ধাবিত করে। বিভিন্নভাবে কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা দিয়ে গিবতের দিকে নিয়ে যায়। যার পরিণতি মারাত্মক। শয়তান ইলমে অধিকারী মানুষকেও এ মারাত্মক অপরাধ ও গোনাহের দিকে ধাবিত করে।
হাদিসের বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, গিবত জেনার চেয়েও মারাত্মক অপরাধ। গিবতের ক্ষমা থেকে জেনার অপরাধে ক্ষমা তুলনামূলক অনেক সহজ। তাই গিবতের অপরাধ ও গুনাহ থেকে বিরত থাকা জরুরি। কেননা তাওবা-ইসতেগফার দ্বারা আল্লাহ তাআলা জেনার গুনাহ ক্ষমা করবেন কিন্তু গিবতেরগোনাহ ক্ষমা করবেন না। বরং যার গিবত করা হয়েছে, আগে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে : যার গিবত করা হয়েছে, ওই ব্যক্তি যদি পরকালের কঠিন সময় হাজার রাকাআত নামাজ, হজ-ওমরাহ, দান-সাদকার সাওয়াব দাবি করে বসে, তবে সেদিন তাকে নিজের দুনিয়ার সব আমল দিয়ে দিতে হবে। নিজেকে হতে হবে নিঃস্ব, অসহায়। সুতরাং গিবত থেকে একেবারে বিরত থাকতে হবে। কোনোভাবেই গিবত করা যাবে না।

বর্তমান সময়ে এমনভাবে গিবত চলছে, তা জনসাধারণ থেকে শুরু করে আলেম-ওলামা পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে। ব্যক্তি পরিবার সমাজ এমনকি ধর্মীয় আলোচনায়ও গিবত চর্চা হচ্ছে। কত মারাত্মক ব্যাপার এটি!
গিবতের ক্ষতিসমূহ : গিবতের আরও কিছু মারাত্মক ক্ষতি রয়েছে। যা মানুষকে চরম অধপতনের দিকে নিয়ে যায়। তাহলো-

১. গিবতের ক্ষতি হলো, এর দ্বারা বিবাদ ও বিভেদ সৃষ্টি হয়। পরস্পর বিবাদের কারণে ঝগড়-লড়াই, মামলা-মুকাদ্দমা চলতে থাকে। একত্রে ও একসঙ্গে থাকার কারণে যে কল্যাণ হয়; গিবতের কারণে তাতে বিভেদ সৃষ্টি হওয়ার পর মানুষ সেই ফায়দা থেকেও বঞ্চিত হয়।

২. গিবত করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরে অন্ধকার ও গোমরাহি সৃষ্টি হয়। যার দ্বারা মানসিক কষ্ট হয়। মনে হয় যেন কেউ অন্তরের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত ও দুর্গন্ধযুক্ত করে ফেলেছে। যার অন্তরের মধ্যে সামান্য অনুভব-অনুভূতিও রয়েছে, সে এই ক্ষতিটা অনুধাবন ও উপলব্ধি করে।

৩. গিবত করার দ্বারা দ্বীন-দুনিয়া উভয় জগতের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যার গিবত করা হয়েছে, সে যদি এটা শোনে, তাহলে গিবতকারীকে অপমান ও লাঞ্ছিত করে। যদি ক্ষমতা থাকে, তাহলে খারাপভাবে তার থেকে প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়ে। দ্বীনি ক্ষতি হলো- গিবত করার দ্বারা আল্লাহ তাআলা নারাজ হন। আর আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি ও নারাজি হলো পরকালকে ধ্বংস করে দেওয়া। নাউজুবিল্লাহ!

৪. হাদিসের পরিভাষায়, গিবত জেনার চেয়েও মন্দ এবং ক্ষতিকর। কেননা তাওবা-ইসতেগফারের দ্বারা জেনার অপরাধ ক্ষমা হয় কিন্তু গিবতের অপরাধ ক্ষমা হয় না।

৫. গিবতকারীকে আল্লাহ তাআলা মাফ করবেন না, যতক্ষণ না যার গিবত করা হয়েছে সে মাফ না করবে। কেননা গিবত হল হুকুকুল ইবাদ বা বান্দার হক।

৬. গিবত করার অর্থ, নিজের মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়া। কে এমন আছে, যে নিজের মৃতভাইয়ের গোশত খাবে! মরা ভাইয়ের গোশত খাওয়া যেমন অপছন্দনীয়; গীবত করাটাও তেমনি জঘন্য ও অপছন্দনীয় কাজ।

৭. গিবতকারী ভীতু হয়ে থাকে। যে কারণে পিছে-পিছে মন্দ কথা বলে বেড়ায়।

৮. গিবত করার দ্বারা চেহারার নুর চলে যায়। আর গিবতকারী লোককে মানুষ অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে।

৯. গিবতের বড় ক্ষতি হলো- গিবতকারীর নেক আমল যার গিবত করা হয়েছে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে। যদি তাতেও বিনিময় সস্পূর্ণ না হয় তবে যার গিবত করা হয়েছে তার গুনাহ ও বদ আমল গিবতকারীর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে গিবতকারীকে জাহান্নামে যেতে হবে।

এ কারণেই হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ তাতে রয়েছে তিনটি ক্ষতি-

১. গিবতকারীর কোনো দোয়াই কবুল হয় না।

২. গিবতকারীর কোনো নেক আমলও কবুল হয় না এবং

৩. গিবতকারীর আমলনামায় পাপ বাড়তেই থাকে।’ (বুখারি)

হাদিসের পরিভাষায় এসব গিবতকারীরা মিসকিন। যাদের আমল অন্যরা নিয়ে যায়। সে কারণে দুনিয়া থেকেই গিবতকারীকে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে এ অপরাধ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরকালের কল্যাণে দুনিয়া থেকে যার গিবত করা হয়েছে, তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া। গিবত করা থেকে বিরত থাকা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যে কারও গিবত করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। কোনো কারণে গিবত করে ফেললে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি থেকে গিবত সম্পর্কে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com