আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার, কাবুল বিমানবন্দরে সেনা ও নাগরিকদের প্রাণহানি এবং বিশৃঙ্খলার সব দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইসঙ্গে আফগান যুদ্ধ শেষ বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তবে শত্রুদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়ে বাইডেন বলেছেন, ‘যারা আমেরিকার ক্ষতি করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে লড়তে আমরা বিশ্রাম নিব না। আমরা তাদের ক্ষমা করবো না, কখনোই ভুলবো না। পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে হলেও আমরা তাদের শিকার করবো। আমেরিকার শত্রুদের অবশ্যই চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে।’
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে হোয়াইট হাউসে বক্তৃতা দেয়ার সময় এসব কথা বলেন বাইডেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শেষে আফগান যুদ্ধ ও সেখান থেকে সেনা এবং নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে দীর্ঘ বক্তৃতা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বক্তৃতার শুরুতেই আফগান যুদ্ধ ও সেখান থেকে সেনাদের ফিরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো জাতিই ইতিহাসে এমন কিছু করে দেখাতে পারেনি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেরই এটি করার সক্ষমতা আছে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দশকের যুদ্ধ এবং সর্বশেষ সেনা ও নাগরিকদের প্রত্যাহারকালে কয়েক সপ্তাহের চরম বিশৃঙ্খলার পাতা যেন ইতিহাস থেকে উল্টে রাখতে চাইলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আফগানিস্তান দখল এবং সেখানে নিজেদের মত ও আদর্শের জাতিগঠনে ব্যর্থ অধ্যায় থেকে চোখ ফিরিয়ে হোয়াইট হাউসের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে ‘অসামান্য সফলতার’ গল্প শোনালেন বাইডেন।
বিশ্রি এবং অদক্ষতার সঙ্গে সেনা সরিয়ে নেয়া নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, আমাদের আরও আগে আফগানিস্তান থেকে সেনা ও নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা উচিত ছিল। তাদের সঙ্গে আমি স্পষ্টভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। আমি মনে করি, এর চেয়ে সুশৃঙ্খলভাবে সেখান থেকে আমাদের সরে আসা সম্ভব ছিল না।’
বাইডেন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সেনা ও নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া যদি জুন কিংবা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেও শুরু করা হতো, তবুও কাবুল বিমানবন্দরে একই রকম ভিড় লেগে থাকতো। এটি এখনো খুব কঠিন এবং বিপজ্জনক মিশন। যুদ্ধের শেষ সময়ে এ ধরনের জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ ছাড়া প্রত্যাবসন করা যেতো না।’
যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি ও সাহায্যের মাধ্যমে আফগানদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা আফগান জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলবো। বিশেষ করে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার থাকবো। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে থাকবে মানবাধিকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা কাবুল ছাড়ার পর মঙ্গলবার তালেবান যোদ্ধারা কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছেন। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে আমেরিকা পরাজিত হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে আফগানদের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আজ থেকে ইসলামিক এমিরেটস অব আফগানিস্তান পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছিলেন, আগস্টের ৩১ তারিখের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে দেশটির সব সেনা সরিয়ে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আমেরিকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাবুল ছেড়েছে।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান যোদ্ধারা রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়ে। তালেবানের কাবুল দখল নিশ্চিত দেখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান পশ্চিমাসমর্থিত আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি।