বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

আরো ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ শ্রীলংকায়

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২
  • ১০০ বার পঠিত

চরম অর্থনৈতিক সংকটের জেরে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ ঠেকাতে নতুন করে আরো ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে শ্রীলংকা সরকার। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) কারফিউর জারির পরদিন শুক্রবার (১ এপ্রিল) জরুরি অবস্থা জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসে।

এদিকে, শ্রীলংকার আইনজীবীদের একটি বড় দল প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসেকে জরুরি অবস্থা উঠিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। দেশের এই অর্থনৈতিক সংকটময় মুহূর্তেও বাকস্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার রক্ষায় জোর দিয়ে তাঁরা ওই অনুরোধ জানান। কিন্তু তা হয়নি।

দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির বরাদ দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যস্ত ক্ষমতাবলে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলংকায় বর্তমানে মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। দুই বছরে দেশটির বৈদেশিক বিনিময় তহবিল কমেছে ৭০ শতাংশ। দেশটির অর্থনীতি এখন মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত। চলছে ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহের মারাত্মক সংকট। অনেক বেড়েছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যও। বিদ্যুৎ সরবরাহ দীর্ঘসময় বন্ধ রাখা হচ্ছে নিয়ম করে।

এদিকে, বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরে খাবার, অর্থ, তেল ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকটে জর্জরিত শ্রীলংকা। ক্রমেই এ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর প্রতিবাদে গত মাস থেকে বিক্ষোভ হচ্ছে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপাকসের বাসভবনের বাইরে তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। ক্রমেই বিক্ষোভ মিছিল বড় হতে থাকে। রাজধানীর উত্তর, দক্ষিণ, মধ্যাঞ্চল ছাড়িয়ে নুগেগোডা, মাউন্ট লাভানিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও রাতে সহিংসতা ছড়ায়। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বাইরে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে।

এছাড়া পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এদিন বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নিতে সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিক্ষোভকালে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পরে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। তবে শুক্রবার ভোরে এ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে পুলিশ। এদিন অন্তত ৫৪ জনকে গ্রেফতারের কথা জানায় নিরাপত্তা বাহিনী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিক্ষোভের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, রাজভবনের সামনে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে ‘পাগল’ বলে চিৎকার করে তার পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা।

তাদের দাবি, রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের দুর্নীতির কারণে এ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তার পরিবারের যেসব সদস্য বিভিন্ন পদ আঁকড়ে আছেন, তাদের পদত্যাগ করতে হবে। প্রেসিডেন্ট এ ঘটনাকে ‘চরমপন্থিদের কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন।

প্রথমে বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ জারি করা হলেও পরে তা শুক্রবার সকালে উঠিয়ে নেওয়া হয়। নজিরবিহীন ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা সামাল দিতে শুক্রবার থেকেই কঠোর আইন প্রয়োগ করা শুরু করেন রাজাপক্ষে। জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কোনো পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষমতা দিয়েছেন সামরিক বাহিনীকে।

সামরিক বাহিনী আগে থেকেই রাস্তায় ছিল। অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে জ্বালানি স্টেশন এবং অন্যান্য স্থানে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করছিল তারা। জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তাদের উপস্থিতি আরো বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিক সময়ে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী কাজ করে পুলিশের সহায়ক ভূমিকায়। কিন্তু জরুরি অবস্থা তাদের নিজেদের তরফে কাজ করার ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছে।

রাজাপক্ষে বলেছেন, গণশৃঙ্খলা বজায় এবং অপরিহার্য সরবরাহ ও সেবার গতি ঠিক রাখতে জরুরি অবস্থা জারি করার প্রয়োজন ছিল।

এক মানবাধিকার আইনজীবী বলেছেন, বর্তমান নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার নয়। অন্যদিকে অলাভজনক সংস্থা কলম্বো সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভের জ্যেষ্ঠ গবেষক ভবানি ফনসেকা জানান, প্রেসিডেন্টের জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতাকে আখ্যায়িত করে এমন নীতিমালা এখনো আরোপ করা হয়নি।

শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই শ্রীলংকায় দোকানপাট খুলতে দেখা যায়। ট্রাফিকও স্বাভাবিক ছিল এ সময়।

ঊল্লেখ্য, শ্রীলংকায় এখন বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট চলছে, যা অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। দিনে ১৩ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ না থাকা, তেল, খাদ্যপণ্য ও ওষুধ সংকটের কারণে দেশটিতে জনঅসন্তোষ চরমে উঠেছে। এ বিক্ষোভকে একটি বড় ধরনের সরকারবিরোধী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

যদিও ২০১৯ সালে বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন রাজাপাকসে। তিনি তখন স্থিতিশীলতা ও দৃঢ়ভাবে দেশ পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে সমালোচকরা এ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন। কারণ প্রেসিডেন্টের ভাই ও ভাতিজারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের আছেন। এটিকেই দেশটির বর্তমান অবস্থার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলছেন অনেকে। এ কারণে রোষানলে পড়েছেন রাজাপাকসে ও তার পরিবার।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, শ্রীলংকাজুড়ে এখন ১৩ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। অথচ প্রেসিডেন্ট আর তার মন্ত্রীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরাও সম্পদশালী, যা মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com