স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। বর্তমানে এই মুহূর্তে দেশের ১৩টি পয়েন্টে বন্যার পানি প্লাবিত হচ্ছে। আগামী ৩-৪ দিন ভারি বৃষ্টিপাত এবং বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এই বন্যা পরিস্থিতি ৭-১০ দিনের বেশি দীর্ঘায়িত হবে না।
শুক্রবার (১৭ জুন) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
এদিকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভপুর হাজার হাজার বসতঘরে বানের পানি ডুকে পড়েছে। ছাতক ও সুনামগঞ্জ শহরের শত শত বসতঘরের নিচতলায় কোমর পানিতে ডুবে আছে। বানভাসি মানুষ জানমাল রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পুরো সুনামগঞ্জ শহরের ৯০ ভাগ বসতঘরে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। ছাতক শহরের শতভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটুপানি থেকে কোমরপানিতে ডুবে আছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে অনায়াসে নৌকা চলাচল করছে। ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কে ৫ স্থানে কোমরপানিতে ডুবে থাকায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ছাতক, তাহিরপুর দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভপুর উপজেলা। এসব এলাকার প্রধান সড়কে এখন সাতার পানিতে নিমজ্জিত। নৌকা ছাড়া এসব উপজেলায় যাওয়ার বিকল্প কোনো বাহন নেই। সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া, সাহেব বাড়িরঘাট, উকিলপাড়া, নুতনপাড়া, শান্তিবাগ হাছননগর, পাঠানবাড়ি জেলরোড, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার, বড়পাড়া, আরপিনগর, মল্লিকপুর ওয়েজখালী, হাজীপাড়া, নবীনগরসহ ৯ ওয়ার্ডের পাঁচশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার ব্যবসায়ী।
বন্যায় সুনামগঞ্জ- সিলেট সড়কের গোবিন্দগঞ্জ-দিঘলী এলাকা প্লাবিত হয়ে সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জনাব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। বন্যার কারণে সুনামগঞ্জ শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বসতবাড়ির শত শত বিদ্যুতের মিটার পানিতে ডুবে গেছে।
সুনামগঞ্জ ও ছাতক শহরজুড়ে এখন থইথই পানি। শহরের এমন কোনো এলাকা ও সড়ক নেই যেখানে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়নি। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ার থেকে শুরু করে নবীনগর পর্যন্ত পানি আর পানি। কোথাও হাঁটু, কোথাও এর চেয়ে বেশি পানি। কাজীর পয়েন্ট এলাকায় পানি বেশি থাকায় সেখানে নৌকার যাতায়াত করেছেন লোকজন।
এ অবস্থায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে প্রশাসনের অনুরোধে বন্যাকবলিত অঞ্চলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করছে তারা।
শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এমন তথ্য জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩ সেন্টিমিটার এবং সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর বাইরে জেলার ছোট ছোট অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে।