আর মাত্র তিনদিন। এরপরই পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছে কোরবানির পশু। এরই মধ্যে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম হয়ে উঠেছে রাজধানীর হাটগুলো। তবে বেশির ভাগ ক্রেতাই হাটে আসছেন অবস্থা বুঝতে। ঈদের যেহেতু তিনদিন বাকি এজন্য তারা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। পশু বিক্রি সেভাবে শুরু না হওয়ায় বিক্রেতারাও বেশি লাভের আশায় দাম হাঁকাচ্ছেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার (৬ জুলাই) থেকে হাট বসার কথা থাকলেও ২-৩ দিন আগে থেকেই কোরবানির পশু আসা শুরু হয় রাজধানীর অস্থায়ী হাটগুলোতে। এসব হাটে কেনা-বেচা চলবে ঈদের দিন অর্থাৎ ১০ জুলাই সকাল পর্যন্ত।
বুধবার রাজধানীর পোস্তগোলা, ধুপখোলা মাঠ, রায় সাহেব বাজারের রাস্তা ও দনিয়া কলেজ মাঠ ও এর আশপাশে বসা অস্থায়ী হাটে সরেজমিন দেখা গেছে, কয়েকদিন আগে থেকে যারা গরু বিক্রির জন্য এসেছেন, তাদের মধ্যে কেউ গরুর খাবার প্রস্তুত করছেন। আবার নতুন করে যারা আসছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ ট্রাক থেকে গরু নামাচ্ছেন, কেউ গরু নিয়ে নির্ধারিত স্থানে রাখছেন।
সিটি কর্পোরেশনের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগেই কোরবানির পশু নিয়ে আসার বিষয়ে ব্যাপারীরা জানান, ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য পছন্দমতো স্থানে গরু রাখতেই আগেভাগে হাটে এসেছেন তারা। ট্রাকে করে আনার সময় কিছু পশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। এজন্য আগেভাগে আমরা হাটে পশুগুলো নিয়ে এসেছি; যেন কিছুটা বিশ্রাম পায়।
দনিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী হাটে আসা ফরিদপুরের ব্যাপারী মিয়া চাঁন শেখ বলেন, গরু আনতে পথে খুব একটা সমস্যা হয়নি। এবার কোরবানি বর্ষার মধ্যে হওয়ায় উঁচু স্থানে পশু রাখতে হাটে আগেভাগেই এসেছি। তিনি আরো বলেন, প্রথম চালানে ১২টি গরু এনেছি। আরো কিছু গরু আনবো।
রাজধানীর পোস্তগোলা হাটে কোরবানির পশু কিনতে আসা রহিম উদ্দিন বলেন, ঈদের এখনও তিনদিন বাকি। আজ হাটে এসেছি। ঘুরেফিরে কয়েকটি পশুও দেখেছি। দর-দাম কেমন যাচাই করছি। তবে দামে যদি মিলে যায় তাহলে পশু আজই কিনে ফেলতে পারি। আর যদি দামে না মেলে তাহলে রাজধানীর অন্য হাট ঘুরে দেখেশুনে পশু কিনবো।
ধুপখোলা মাঠের গরুর হাটে কথা হয় ঝিনাইদহ থেকে আসা বিক্রেতা রফিকুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটে এখনও কেনাবেচা শুরু হয়নি। কিছু ক্রেতা আসছেন। তারা গরু দেখে দর-দাম করছেন। তবে শুক্রবার থেকে বেচাকেনা বেশি হতে পারে। এখন বর্ষাকাল। গরু কিনে রাখাটাও কষ্টের। রয়েছে খাবার কেনার একটা ঝামেলাও। এজন্য ঈদের দুই একদিন আগে পশু কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন ক্রেতা। তখন বিক্রি বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই হাটে গরু ভর্তি গাড়ি আসছে। আগামী দুই-একদিনে সরবরাহ আরো বাড়বে। তখন দাম কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া নিয়ে চিন্তার কথাও জানান এ ব্যবসায়ী।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় এবার ১০টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বাইরে সারুলিয়ার স্থায়ী হাটেও কোরবানির পশুর হাট বসেছে।
তিনি আরো বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ইজারা দেওয়া স্থানেই কোরবানির পশুর হাট বসাতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাটের শৃঙ্খলা ও পশুর ব্যাপারীদের নিরাপত্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে।
মো. মনিরুজ্জামান আরো বলেন, চলমান করোনা সংক্রমণের মধ্যে কোরবানি এসেছে। এর মধ্যেই আমাদের পশুর হাট বসাতে হয়েছে। ফলে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাইকে পশুর হাটে আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মুখে মাস্ক পরার জন্য বিশেষভাবে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বিগত বছরের মতো এবারও পশুর হাটগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাটের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবার সমন্বিতভাবে কাজ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।