নিজস্ব প্রতিবেদক: এমপিও ভুক্ত আলিম মাদ্রাসার আয়া ও গার্ড পদে চাকুরি দেওয়ার নামে প্রতিটি পদের জন্য ৬ লাখ টাকা করে ১২ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। চতুর্থ শ্রেনীর এমন চাকুরির জন্য এতো বেশী টাকা ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এলাকার সচেতন মানুষের মাঝে আলোড়ন সৃস্টি করেছে। একজন আলেম হয়ে ঘুষ খায় চায়ের দোকান এমন আলোচনার ঝড় বইছে। গঠনাটি ঘটেছে ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন উপজেলার ৮ নং ওয়ার্ডে মধ্য আড়ালিয়া রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসায়। মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহীম সভাপতির যোগ শাজেশে চাকুরির নিশ্চয়তা দিয়ে নিয়োগের আগেই ১২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে একাধিক সুত্রে নিশ্চিত করেছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রতিটি দপ্তরে কঠোর নজরদারীসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত প্রদক্ষেপ নিলেও সেটাকে তোয়াক্কা না করে নগ্ন ঘুষ বানিজ্যে মেতে উঠেছেন অর্থ লোভী, দুর্নীতিবাজ মধ্য আড়ালিয়া রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসায়র অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইব্রাহীম। করোনা ভাইরাস মহামারী দুর্যোগে সারা দেশের মানুষ মৃত্যু থেকে বাঁচার লড়াই করছে, করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছে , অন্যায় ,অপরাধ ও অপকর্ম থেকে বিরত থাকছে আর এই করোনার মধ্যেই পরকালের ভয় না করে ঘুষ গ্রহনের বিনিময়ে চাকুরি দিচ্ছেন মাওলানা ইব্রাহীম।
সৃত্রে জানা যায়,গত ২২ শে মার্চ ২০২০ইং তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় মধ্য আড়ালিয়া রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসায় ১জন অফিস সহকারি কাম হিসাব, ১ জন গার্ড ও ১ জন আয়া নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১২ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে গার্ড পদে মো. ইউসুফ এবং আয়া পদে সুজিনার চাকুরি নিশ্চিয়তা দিয়েছেন মাওলানা ইব্রাহীম। আর অফিস সহকারী কাম হিসাব পদে তিন জন আবেদন করেন। এরই মধ্যে একজন আবেদন কারীর কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা ঘুষ দাবী করছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও সভাপতি।
মহামারী করোনায় নিয়োগ বন্ধ থাকায় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসাটির কমিটির সভাপতির মৃত্যুতে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয় এবং ইউসুফ ও সুজিনাকে আরো ২ লাখ করে ৪ লাখ টাকা রেডি করতে বলেন মাওলানা ইব্রাহীম। মেয়াদ শেষ না হতেই নিজেদের পছন্দ মত কমিটি নির্বাচন করে ঘুষ নেওয়া আবেদনকারীদের চাকুরী দেওয়ার লক্ষ্যে ভুঁয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে তাড়াহুড়া করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা করেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা পক্ষ আদালতের স্মরণাপন্য হলে মহামান্য আদালত কমিটি নিয়োগে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা পক্ষকে ফাঁসানোর জন্য মাওলানা ইব্রাহীম রাতের আধারে লাইব্রেরিতে থাকা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি মাটিতে রেখে জমিদাতা পক্ষের মো, জাকির হোসেনসহ আজ্ঞাতনামা আনেকের নামে থানায় অভিযোগ করেন। থানা পুলিশ তদন্ত করে দেখেন মাওলানা ইব্রাহীমের করা অভিযোগটি সম্পুন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বরং মো, জাকির কে ফাঁসানোর লক্ষ্যে মধ্য আড়ালিয়া রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহীম নিজেই রাতে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবি মাটিতে রেখে অবমাননা করেও মাওলানা ইব্রাহীম রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মধ্য আড়ালিয়া রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসাটি ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অত্র মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ মাও. ইব্রাহিম ১৯৮৩ সালে আলিম পাশ করেন। কিন্তু অধ্যক্ষ মাও. ইব্রাহিম ১ জানুয়ারী ১৯৮৫ সালে ভূয়া ফাজিল পাশের সনদ দিয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানে সহকারী মৌলভী পদে অবৈধ নিয়োগ নেন ও নভেম্বর ১৯৮৬ সালে মাদ্রাসাটির প্রথম এমপিওতে তিনিও এমপিওভূক্ত হন, তার ইনডেক্স ৩৫৭৬৪৭।
তিনি চাকুরীর নীতিমালাভঙ্গ করে ১৯৮৫ সালে ফাজিল ও ১৯৮৮ সালে কামিলে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। পরে মাও. ইব্রাহিম কোন অভিজ্ঞতা ছাড়া ১লা মার্চ ১৯৮৯ সালে অত্র মাদ্রাসার সুপার পদে নিয়োগ নেন নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী এটিও অবৈধ। নিয়োগ নীতিমালায় আছে সুপার পদে নিয়োগ পেতে হলে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তৎকালীন সময় মাও. ইব্রাহিমের অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়নি।
পরবর্তীতে মাদ্রাসাটি আলিম স্তরে উন্নতি হলে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কিন্তু মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন ৩৫৭৬৪৭ ইনডেক্সধারী ইব্রাহিম তিনি নয় দাবী করলেও বর্তমান অধ্যক্ষ মাও. ইব্রাহিম একই ইনডেক্সে বেতনভাতা উত্তোলন করেন। উল্লেখ্য যে মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে উল্লেখিত ইব্রাহীম ব্যতিত অন্য কোন ইব্রাহীম এখানে চাকুরী করে নাই বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত করেছে। এসব বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিলেও কর্মকর্তারা কোন ব্যবস্থা নেননি।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব মো.কামাল হোসেন বলেন এ বিষয়ে আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স। অভিযোগ সত্য হলে মাওলানা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।