জমি কেনা বাবদ অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি এম এ কাশেম ও রেহানা রহমানকে জামিন দেননি হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং খিজির হায়াত চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করেন। যার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৬ আগস্ট দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত সোমবার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যকে কারাগারে পাঠান আদালত। সেইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে আসামিদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদেরও অনুমতি দেন বিচারক।
এ চারজন হলেন- রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ।
গত ২৩ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেন। দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে আদালতে হাজির করা হয় তাদের। এরপর দুদক তাদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করে।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কারাগারে প্রথম শ্রেণির ডিভিশন চেয়ে আবেদন জানান। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে একদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।
এছাড়া কারাবিধি অনুযায়ী তাদের ডিভিশন দেয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। তাদের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ। একই সঙ্গে তাদের গ্রেফতার করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিম্ন আদালতে হাজির করতে শাহবাগ থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। তাদেরকে শাহবাগ থানা হেফাজতে পাঠানো হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয় তাদের।
ওই সময় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার সময় সংবাদকে জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আসামিদের থানা হাজতে রাখা হয়। তারপর আসামিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয়।
আদালতে আসামি এম এ কাশেম ও রেহানা রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ এবং শাহজাহানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল। এ ছাড়া তাদের সহযোগিতা করেন আইনজীবী মিজান সাঈদ।
অন্যদিকে শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ এবং এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত ১২ মে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।
মামলার আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
পরে গত ১৯ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চার সদস্যের জামিন আবেদনের জন্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।