মৌসুমের শুরুতেই ‘সোনালি আঁশ’ পাটের দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেশি পাচ্ছেন কৃষকরা। ভালো দাম পাওয়ায় স্বস্তি ও খুশি কুষ্টিয়া জেলার পাট চাষিরা।
কুষ্টিয়া সদর, খোকসা, কুমারখালী, ইবি, মিরপুর, ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার পাট চাষিরা জানান, গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম বেশি। গত বছর এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু এ বছর মৌসুমের শুরুতেই বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকায়।
প্রতি বিঘায় শুধু পাট বিক্রি করেই লাভ পাচ্ছেন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে পাটখড়ির দাম যোগ করলে প্রতি বিঘায় এখন কৃষকের লাভ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলার ছয়টি উপজেলায় এ বছর ১ লাখ ১ হাজার ২৮৪ একর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৩০ ভাগ বেশি। জমিতে দেশি, রবি-১, মোস্তা, জেআরও এবং তোষা জাতের পাট চাষ করা হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ান ও শুকান নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। বৃষ্টিতে পুকুর-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি না থাকায় এবার পাট জাগ দেওয়ায় অনেকে এলাকায় চাষিদের সমস্যায় পড়েছেন। তবে বড় বড় নদীতে অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে পাট এনে জাগ দিচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের চাষ বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর পাটের দাম ও ফলন বেশি হয়েছে। ফলে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
কৃষি অধিদফতর আরো জানায়, চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘায় আট থেকে ১০ মণ পাট উৎপাদিত হচ্ছে। গত বছরের এ সময় প্রতি মণ পাটের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এ বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯০০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুষ্টিয়ার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা এলাকায় পাটচাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ জমি থেকে পাট কাটছেন, কেউ পাটের বোঝা বাঁধছেন, কেউ কেউ মাথায় করে সেই বোঝা নিয়ে যাচ্ছে নদী-খাল কিংবা পুকুরে। আবার অনেক জায়গায় পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। অনেকে আঁশ ছাড়িয়ে, পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বিক্রির জন্য বাজারে নিচ্ছেন।
কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়ার মোল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক ফজলুল হক বলেন, গত বছরের চেয়ে এ বছরের পাটের দাম বেশি। গত বছর পাটের মণ ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা। এবার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া এবার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার কৃষক হামিদুর হক বলেন, এ বছর চার বিঘা পাটের চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১২ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। খরচ বাদে দ্বিগুণ লাভ হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় আমরা লাভবান।
কুষ্টিয়া জেলা পাট অধিদফতরের মুখ্য কর্মকর্তা সোহরাব উদ্দিন বিশ্বাস জানান, গত বছর কৃষকরা সর্বশেষ ২ হাজার ৪০০-২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত মণ হিসেবে পাট বিক্রি করেছেন। যখন পাট ওঠে তখনও ১ হাজার ৭০০-২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত দাম পেয়েছেন। এবারে পাটের দাম শুরু থেকেই আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ জানান, গত বছরের চেয়ে উৎপাদন, চাষের পরিমাণ ও দাম এ বছর বেশি। পাট চাষের উপযোগী আবহাওয়ার ফলে ফলন বেশি পেয়েছেন কৃষক। বাজারে পাটের দাম ভালো যাচ্ছে। আশা করি আগামী বছর কৃষকরা পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন।
তিনি আরো বলেন, পাট অধিদফতর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পাট চাষিদের প্রণোদনা প্রকল্পের মাধ্যমে পাট বীজ, রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। পাটের দাম ভালো হওয়ায় চাষিরা পাট চাষে বেশি আগ্রহী হয়েছেন।