কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল জোনে ‘টর্চার সেলের’ জিম্মি অবস্থা থেকে পর্যটকসহ চারজনকে উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত দালালচক্রের মূলহোতা মো. আবেদুল মালেককে গ্রেফতার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
রোববার (১৪ আগস্ট) মধ্যরাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের নীলিমা রিসোর্টের সামনে এ অভিযান চালানো হয় বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম। গ্রেফতার হওয়া মো. আব্দুল মালেক (৩৮) কক্সবাজার শহরের পশ্চিম বাহারছড়া এলাকার মৃত গোরা মিয়ার ছেলে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার মালেক একজন ইজিবাইক (টমটম) চালক। সে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি কক্সবাজারের আবাসিক হোটেল-মোটেল জোন দালালচক্রের মূলহোতা। তার নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্র রয়েছে।
গত ৮ আগস্ট কক্সবাজার শহরের লাইট হাউস এলাকাসংলগ্ন আবাসিক কটেজ জোনে অভিযান চালিয়ে একটি টর্চার সেলের সন্ধান পায় পুলিশ।
এ সময় কটেজ ব্যবসার আড়ালে ‘টর্চার সেলে’ জিন্মি রাখা অবস্থায় দুই পর্যটক ও দুই কিশোরকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সাইনবোর্ডবিহীন শিউলি রিসোর্ট নামে ওই আবাসিক কটেজে তল্লাশি চালিয়ে নির্যাতন চালানো ও আপত্তিকর কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছুসংখ্যক উপকরণ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকালে ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুনের বাবা মো. বেলাল আহমেদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১১ জনকে আসামি করে কক্সবাজার থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আসামিদের মধ্যে আট পুরুষ ও তিন নারী রয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্র জানিয়েছেন, শিউলি রিসোর্ট নামের আবাসিক কটেজের কথিত ‘টর্চার সেলে’ পর্যটকদের জিম্মি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল হামিদ। ঘটনার তদন্তে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার ব্যাপারে কয়েকজনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
মো. রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজারে হোটেল-মোটেল জোনে টর্চার সেলে পর্যটকদের জিম্মি রেখে নির্যাতনের মামলার তদন্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পাশাপাশি জড়িতদের কয়েকজনকে পুলিশ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। রোববার (১৪ আগস্ট) মধ্যরাতে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টসংলগ্ন নীলিমা রিসোর্টের সামনে ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ দালালচক্রের মূলহোতা মো. আবদুল মালেক অবস্থান করছে খবর পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। এতে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্দেহজনক একজন পালানোর চেষ্টা করলে তাকে ধাওয়া দিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতার ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পর্যটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কথিত টর্চার সেলে পর্যটকদের জিম্মি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় সংঘবদ্ধ দালালচক্রের মূলহোতা আবদুল মালেক জড়িত থাকার তথ্য পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে সক্রিয় দালাল ও অপরাধীচক্রের ব্যাপারে সে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।
‘আবদুল মালেকের নেতৃত্বে সক্রিয় দালালচক্রের সদস্যরা আগত পর্যটকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা এবং বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করত। এ চক্রটি কম ভাড়ায় ভালো মানের হোটেলের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলে কমিশন বাণিজ্যের পাশাপাশি অপরাধীদের হাতে পর্যটকদের তুলে দিত। শুধু তা-ই নয়, দালাল চক্রটি কলাতলী এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালীর কাছে মাসিক চাঁদা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অপরাধ চালিয়ে আসছিল বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম।
পর্যটন পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, ঘটনায় জড়িত যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদেরই গ্রেফতার করা হবে।