প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। ‘বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক দিবস’ তার ব্যতিক্রম নয়।
প্রতি বছর ২১ আগস্ট ‘বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক দিবস’ সারা পৃথিবী জুড়ে প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় এই দিনটির কথা প্রথম ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রসংঘের প্রত্যেকটি সদস্য দেশ এই দিনটি পালন করে থাকে।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৫০ সালে পুরো বিশ্বে ষাটোর্ধ্ব বা তার বেশি বয়স্ক মানুষের সংখ্যা হবে ২০০ কোটি, যা বিশ্বের সর্বমোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ এরও বেশি। এই সংখ্যার বিচারে এশিয়া মহাদেশে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ পরিমাণ।
এই দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের ১৯৮৮ সালে ফিরে যেতে হবে। ১৯৮৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান এই দিনটির সূত্রপাত করেন। ১৯৮৮ সালের ১৯ আগস্ট তিনি ৫৮৪৭ এর প্রোমালগেশনে স্বাক্ষর করেন। এর ভিত্তিতেই ২১ আগস্ট দিনটি বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।
বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক দিবস উদযাপন করার প্রধান লক্ষ্য হলো বয়স্ক মানুষজনের সামগ্রিক অবস্থার জন্য সচেতনতা গড়ে তোলা এবং তাদের বার্ধক্যকালীন সময়ে তাদের পাশে থাকা। এর সঙ্গে সমাজের প্রতিটি স্তরে তাদের অবদান তথা জ্ঞান ও দক্ষতাকে স্বীকৃতি জানাতে তাদের জন্য এই বিশেষ দিনটি নির্দিষ্ট করা হয়।
প্রত্যেক মা বাবা তাদের সন্তানদের জন্য যা করে থাকেন সেই ঋণ কখনোই শোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু, সেই মা বাবা প্রকৃতির নিয়মে বার্ধক্যের দিকে এগোলে সন্তান অন্ততঃ তাদের কর্তব্যটুকু পালন করতেই পারেন। বয়স্কদের যোগ্য সম্মান করা, দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকা, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের একা না অনুভব করতে দেওয়ার দায়িত্ব নবীন প্রজন্মের ওপরেই বর্তায়। এই মূল্যবোধকে সবার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতেই ২১ আগস্ট বিশ্ব প্রবীণ নাগরিক দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
যে কোনো সাধারণ মানুষের পবিত্র কর্তব্য বয়স্কদের প্রতি সম্মান জ্ঞাপন বা তাদের পাশে থাকা। কোনো বিশেষ দিনে এই সম্মান বা পারস্পরিক নির্ভরতা সীমাবদ্ধ না থাকলেও এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার পিছনে জনসচেতনা গড়ে তোলা ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেটি হলো সরকারকে বয়স্ক মানুষজনের হিতার্থে উদ্যোগ নিতে বাধ্য করা। সরকার যে বয়স্ক মানুষজনের সার্বিক কল্যাণের প্রতি দায়বদ্ধ এই দিনটি তারই ইঙ্গিতবাহী।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মধ্যে নানা পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে। শারীরিক সমস্যা যত না জটিলতা সৃষ্টি করে, মানসিক অস্থিরতা, একাকীত্ব এই বয়সী মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। সেখান থেকে মানসিক অবসাদ এবং অন্যান্য সমস্যা তাদের ঘিরে ধরে। এই সময়ে তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করা এবং তাদের সবরকমভাবে সাহায্য করাই একমাত্র সমাধান। পুরো বিশ্বে এই দিনটি বিভিন্নভাবে পালিত হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের উদযাপনই হয় বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে কোনোভাবে সময় কাটানোর মাধ্যমে। এই দিনটিকে যে যে উপায়ে উদযাপন করা যায় তার একটি তালিকা করলে যা দাঁড়ায় তা এরকম-
>>> একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে বয়স্ক মানুষজনের সঙ্গে বিশেষ করে যাদের সঙ্গে সচরাচর কেউ দেখা করতে যাননা তাদের সঙ্গে কিছু অমূল্য সময় কাটিয়ে আসা যায়।
>>> শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন জিনিসের ওপর ছাড় দেওয়া হয়। কেউ নিজে প্রবীণ নাগরিক হলে এই জিনিসগুলো ছাড়সহ উপভোগ করে উদ্যোক্তাদের উদ্যোগকে সফল করতে পারেন।
>>> নিজের এলাকায় প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
>>> প্রবীণ মানুষজনের সমস্যার কথা সরাসরি অথবা গণমাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
>>> বিভিন্ন গণমাধ্যমে #Senior Citizensday #WorldSeniorCitizens Day এই হ্যাশট্যাগগুলোর মাধ্যমে এই দিনটিকে জনপ্রিয় করে তোলা যেতে পারে।
এইভাবেই পুরো বিশ্বে প্রবীণ নাগরিক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। এই বিশেষ দিনটির পাশাপাশি প্রত্যেকদিন প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি আমাদের সম্মান এবং আন্তরিকতা অটুট থাকলেই এই দিনটির অবতারণা যথার্থ সাফল্য পাবে।