একসময় দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও উল্লাপাড়া তাঁতপল্লীগুলোতে শুরু হতো তাঁত বুননের খটখট শব্দ। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলত পাওয়ার লুমও। কিন্তু বর্তমানে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাঁত মালিকদের।
প্রতিদিন তিন থেকে চারবার লোডশেডিংয়ের ফলে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর উৎপাদন কমে যাওয়ায় একদিকে পাইকারদের চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি তৈরি করতে না পারায় লোকসানের মুখে তাঁত মালিকরা। অন্যদিকে লোডশেডিংয়ের সময় তাঁত কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকদেরও কমেছে আয়।
বেলকুচি তাঁতপল্লীর তাঁত শ্রমিক আবু হানিফ জানান, আগে যেখানে সপ্তাহে ১০ থেকে ১২টি শাড়ি উৎপাদন হতো সেখানে লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় ৬ থেকে ৮টি শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এতে আমাদের আয় রোজগার অনেক কমে গেছে। এখন আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। একই কথা জানান অন্যান্য তাঁত কারখানার শ্রমিকরাও।
এদিকে মাধবী শাড়ির স্বত্ত্বাধিকারী কৌশিক সাহা জানান, করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন আমাদের তাঁত কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। এতে আমাদের বিপুল অঙ্কের লোকসান হয়েছে। করোনার প্রভাব খাটিয়ে এই তাঁতশিল্পের মালিকরা যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ক্রমাগত লোডশেডিংয়ের ফলে পাইকারদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা শাড়ি উৎপাদন করতে পারছি না। সেই সঙ্গে শাড়ি উৎপাদনের কাঁচামাল রং ও সুতার দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি এখন চরম লোকসানের মুখে রয়েছে। লোকসানের কারণে অনেক তাঁত মালিক তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। তাঁতশিল্পকে লোকসানের হাত থেকে রক্ষায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।
বেলকুচি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিছুর রহমান বলেন, জেলার তাঁতশিল্পের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জেলার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটির লোকসান কমাতে আমরা কাজ করছি।
জেলায় তাঁত, পাওয়ার লুম ও হ্যান্ড লুম রয়েছে প্রায় ৫ লাখ। আর এর সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৫ লাখ শ্রমিক।