প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চয় করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া সব পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মনোযোগী হতে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের (আইডিইবি) ২৪তম জাতীয় সম্মেলন ও ৪৩তম কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি’র ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আবারো সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি যেন বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় বাংলাদেশের জনগণকে কোনো দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে না হয়। আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনদিন অবনতি হওয়ায় দেশের জনগণকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। এখন থেকেই আমাদের কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে, সঞ্চয় করতে হবে এবং কোনোমতেই অতিরিক্ত ব্যয় করা যাবে না। আর উৎপাদন বাড়তে হবে। নিজেদের খাদ্য উৎপাদনে সবসময় যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি সেই ব্যবস্থাও নিতে হবে।
সরকার প্রধান বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে দেশের সব ঘর আলোকিত করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেই খরচ কমাতেও কিছু ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত যে প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করতে হবে সরকার সে গুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করবে। আমাদের পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনোভাইরাসের পর পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। এ সংকট উত্তরণে চেষ্টা চলছে। আজকে সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। এর প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। তাই এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। যার পক্ষে যা সম্ভব, তাই যেন উৎপাদন করে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যলেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার জাতীয় সামগ্রিক দক্ষতা উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে জানিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন থেকেই তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে দক্ষ জনশক্তিতে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে দেশের জনশক্তিকে মানিয়ে নিতে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, রোবটিক্সের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। এ লক্ষ্যেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম এবং সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ আজকে গড়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, সব মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদরাসায় ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ১০০ নম্বরের কারিগরি বিষয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নিয়েছি। ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে প্রত্যেক মাধ্যমিক স্কুল ও দাখিল মাদরাসায় এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সও চালু করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ-বিদেশের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে ৬৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে আরো ২৪টি টিটিসি যোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আরো ৮৮টি টিটিসি স্থাপনের পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছে সরকার। এসব টিটিসিতে মধ্য প্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়; বিশ্বের আর কোন কোন দেশে শ্রমিক পাঠানো যায় যে জন্য শ্রম বাজার খুঁজে দেখছে সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, প্রযুক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ, আঞ্চলিক যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্যতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছি। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে কারিগরি বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কাজেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও আমুল পরিবর্তন আনতে হবে এবং এরই মধ্যে আমরা সে কাজ শুরু করেছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পেশাগত ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য বরেণ্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝে আইডিইবি স্বর্ণপদক প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ স্বর্ণপদক লাভ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ হালিম বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর করিম খান এবং বাপেক্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী।
প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ’ প্রকাশিত স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রীর কাছে মুজিববর্ষের লোগো হস্তান্তর করে ‘বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ’।