মা জিনিয়া আক্তার এসএসসি পরীক্ষার্থী। মাত্র ৭ দিন বয়সী নবজাতক সন্তানকে নিয়ে ছুটে আসলেন পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষার্থী মা তার দুধের শিশুকে নিয়ে বসে আছেন কেন্দ্রে। হঠাৎ নজরে আসেন শিক্ষক ও কেন্দ্রে নিয়োজিত দায়িত্ব কর্মকর্তাদের।
তখন পরীক্ষার্থী জানান, শিশুটি বুকের দুধ না খাওয়ালে কান্নাকাটি করবে। এ সময় কেন্দ্রের একজন শিক্ষক শিশুটিকে কোলে নিয়ে পাশের একটি নিরাপদ কক্ষে বড় বোনের কোলে তুলে দিলেন। নবজাতক দুধের পিপাসার জন্য কান্না শুরু করলে জিনিয়া ছুটে চলে যান পাশের কক্ষে। সেখানে প্রিয় সন্তানকে দুধ পান করিয়ে আবার হলরুমে খাতা-কলম নিয়ে লেখা শুরু করেন। এভাবেই পুরো পরীক্ষা দিলেন অদম্য এ পরীক্ষার্থী।
এ সময় সন শিক্ষক ও পরীক্ষার হলে থাকা ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকার, মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার পরিতোষ সুত্রধরসহ সকলের দৃষ্টি ছিলো এ মেধাবী ছাত্রীর দিকে। সবাই চেষ্টা করেছেন যেন দুধের পিপাসার জন্য নবজাতককে কষ্ট করতে না হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় ফুলপুরে ৭টি কেন্দ্রে ২৯৭৯ জন ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। ঐ উপজেলার মেরিগাই উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে জিনিয়া আক্তার।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভাইটকান্দি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসেন জিনিয়া আক্তার। নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে হয়। জিনিয়ার বাবা নেই, মায়ের চেষ্টায় লেখাপড়া করছেন তিনি। বাবা না থাকায় অল্প বয়সে বিয়ে হলেও মেধাবী এ ছাত্রী লেখাপড়া ছাড়েননি। তাই সাতদিন বয়সী নবজাতককে সঙ্গে নিয়েই এসেছেন এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে।
জিনিয়ার প্রশংসা করে মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার পরিতোষ সূত্রধর বলেন, মানসিক শক্তি থাকলে নারীর পক্ষে সবই সম্ভব। সন্তান ও নিজের ভবিষ্যৎ সুন্দর করতে পড়ালেখার বিকল্প নেই।
ফুলপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও শীতেষ চন্দ্র সরকার বলেন, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এসব শিক্ষার্থীদের এগিয়ে চলা। আগামী দিনে এরাই হবে দেশের ভবিষ্যৎ।