বিশ্ব শিক্ষক দিবস ৫ অক্টোবর। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো :‘The transformation of education begins with teachers.’ অর্থাৎ ‘ শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষার রূপান্তর শুরু।’ আগামি ২০২৩ সালের গোটা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিবর্তন আসছে তা শিক্ষক দ্বারাই শুরু করতে হবে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষযটি যেন আমাদের পরিবর্তিত বিষয়ের সঙ্গে মিশে গেছে।
বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচনি অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ শিক্ষার সকল স্তরে আইসিটি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আইসিটিতে অগ্রসর বা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি ও দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার জন্য প্রাথমিক স্তর হতেই আইসিটি শিক্ষা অর্ন্তভুক্তকরণের বিষয়টি বাস্তবসম্মত ও যুগান্তকারী একটি ধারণা ও পদক্ষেপ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি শিক্ষা সম্প্রসারণ এবং দক্ষ জনশক্তি গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে।
জানা মতে-শিক্ষা ও্র দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের অধীন ‘সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন’প্রকল্পের মাধ্যমে জানুয়ারি, ২০১৫ জুন হতে ২০১৯ পর্যন্ত দেশের ৬৪টি জেলায় প্রশিক্ষণ ল্যাবসহ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪ হাজার ১টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটি বিদ্যালয়সমূহে ১৫টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
দেশে গত কয়েক বছরে শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য নেয়া হয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন,প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় শতভাগ ভর্তি, ২৬,১৯২টি বিদ্যালয়ের ১,০৪,০০০ জন শিক্ষককে জাতীয়করণ, নতুন প্রজন্মকে আইটি খাতের ‘দক্ষ জনশক্তি’ হিসাবে গড়ে তুলতে সারাদেশে ১৪ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, বিনামূল্যে বই বিতরণ,উপবৃত্তি প্রচলন, নতুন নতুন একাডেমিক ভবন স্থাপন করা,এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ, স্বল্প সময়ে ফলাফর ঘোষণা ইত্যদি সরকারে শিক্ষার উন্নয়নে করে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।
সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপুমনি এমপি তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে সারাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে নিররসভাবে কাজ করছেন। গ্রাম-গঞ্জে সুরম্য নতুন নতুন ভবনগুলো এর একটি প্রকৃত উদাহরণও বটে।
যতদূর জানা গেছে-১৯৬৬ সাল থেকে প্যারিসে শিক্ষকের মর্যাদা সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সম্মেলনে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং মর্যাদা সম্পর্কে একটি যৌথ সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। উক্ত সুপারিশমালায় শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নেয়াসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, দায়িত্ব ও অধিকার,চাকুরির নিরাপত্তা,শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া,পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন,শিক্ষাসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ,কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছিল ।
আন্তর্জাতিক এ সংগঠনটি পর্যায়ক্রমে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো কর্তৃক প্রণীত দলিলটি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনের গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কোর তৎকালীন মহাপরিচালক ড.ফ্রেডারিক এম মেয়রের ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’পালনের শুভ সূচনা হয়।
প্রতি তিন বছর পরপর অনুষ্ঠিত আইএলও ইউনেস্কো যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় উচ্চ শিক্ষায় নিয়োজিত শিক্ষকদের জন্য একটি সুপারিশমালা গৃহীত হয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
বিশ্বের ১শ’৬৭ টি দেশের এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এ দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪শ’১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রেখে আসছে। এ সংগঠনটি বিশ্বের ৩ কোটি ২০ লাখ সদস্যের প্রতিনিধিত্ব করে।
প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। দিবসটি পালনের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।
মানসম্মত শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ বৈশ্বিক পরিবর্তন ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নের ফলে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষণ-শিখনেও পরিবর্তন-পরিবর্ধন সাধিত হচ্ছে। এইসব পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও আধুনিক শিক্ষণ-শিখনের সাথে শিক্ষকদের অভিযোজনের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত কয়েক দশক ধরে সবার জন্য শিক্ষা অর্জনে যেসব টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছিল অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলোর উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষা উন্নয়নে সামনের দিনগুলোতে শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। ২০১৪ সালের ইউনেস্কো গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্টে সকল শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষর জন্য শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষতার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন, পেশাগত-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সচেতন শিক্ষকের বিষয়টিকে অনুধাবন করা প্রয়োজন। এ সকল প্রেক্ষাপটে সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে বাংলাদেশের শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য গৃহীত নতুন লক্ষ্যমাত্রা মানসম্মত শিক্ষার জন্য পেশাদার ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষকের ওপর বিশষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হলেও আশানুরূপ বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাব বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলো কাজ করলেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে যেতে হবে আরো অনেক দূর।