আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
বেকার যুবকদের স্বপ্ন পূরণ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি)।
উদ্বোধনের পর থেকে প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে বিদেশগামী কর্মীদের তিনদিনের প্রশিক্ষণ (পিডিও) কার্যক্রম। এ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচে মোট ৮০ জন শিক্ষার্থী এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত ২৮ জুলাই ভার্চুয়ালিভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ টিটিসির উদ্বোধন করেন।
বিষয়টি ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম।
তিনি জানান, উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্তু মোট ছয়টি ব্যাচে ৮০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আগামী জানুয়ারি থেকে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের কার্যক্রমও শুরু হবে।
তিনি আরও জানান, প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি আসার পর পর্যায়ক্রমে ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, আইটি সাপোর্ট টেকনিশিয়ান, অটোমেকানিক্স/ডিজেল ইঞ্জিন মেকানিক, সিভিল কন্সট্রাকশন, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং (আর এসি) ট্রেডের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ ফরিদপুর সফরে এসেছিলেন। তখন তিনি যেসব উন্নয়নকাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন, তার মধ্যে কামারগ্রামের টিটিসি একটি। এর মাসখানেকের মাথায় শুরু হয় প্রকল্পের কাজ।
টিটিসির তিনটি ভবনের একটি একাডেমিক, একটি ডরমিটরি, একটি প্রিন্সিপাল ও ভাইস প্রিন্সিপালের কোয়ার্টার ও ছাত্রী হোস্টেল। একাডেমিক ভবনটিতে ক্লাস হবে। ডরমিটরিতে থাকবেন ছাত্ররা। প্রিন্সিপালদের আবাসিক কোয়ার্টারের ওপরে ছাত্রীদের আবাসন ব্যবস্থা থাকবে।
আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছে কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী। আলফাডাঙ্গাকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে উপজেলার মধ্যে সর্বপ্রথম ১৯৩৭ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন মরহুম কাঞ্চন মুন্সী।
এছাড়াও কামারগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ঈদগাহ, কবরস্থান, খেলার মাঠ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা কাঞ্চন মুন্সীর দান করা জায়গায় স্থাপিত হয়েছে।
কাঞ্চন মুন্সী শুধু নিজ গ্রামেই নয়, আশপাশের শত শত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছিলেন। তারই সুসন্তান মরহুম মুন্সী বজলার রহমান কাঞ্চন একাডেমীকে ৯০ শতাংশেরও বেশি জমি দান করেছিলেন। কাঞ্চন একাডেমির সেই জায়গায় নির্মিত হয়েছে টিটিসি।
এই মুন্সি পরিবারের সুযোগ্য উত্তরসূরী, মরহুম কাঞ্চন মুন্সির প্রপৌত্র আরিফুর রহমান দোলন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করে প্রতিষ্ঠানটি কামারগ্রামে এনেছেন।
এছাড়াও আরিফুর রহমান দোলনের চেষ্টায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দিরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামাগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এখনও হচ্ছে।
আলাপকালে আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘এই কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) দেশে-বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা মেটাবে। এতে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। যদি একজন মানুষ দক্ষ হয় তাহলে তার কাজের কোনো অভাব হয় না।’ ‘এখান থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরে কাউকে কাজের পিছনে দৌড়াতে হবে না, কাজই তাদের পিছনে দৌড়াবে’ বলে আরও যোগ করে তিনি।
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রফিকুল হক বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান শুধু আলফাডাঙ্গা নয়, আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এরকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে এত সুন্দর একটি প্রতিষ্ঠান করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি । সেই সঙ্গে যারা এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত, স্থানীয়ভাবে যারা জমি দান করেছেন বা এত সুন্দর একটি উদ্যোগ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন আমি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’