পিরোজপুরে বিশুদ্ধ পানিতে দেখা দিয়েছে লবণাক্ততা। ২০০৭ সালের সিডরের জলোচ্ছ্বাস এ এলাকার জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়। ধান, নদী, খালে পরিচিত এ জেলায় পাল্টে যায় পুরনো রূপ; বিরূপ প্রভাব পড়ে কৃষি ও পরিবেশে।
এতে নদ নদী ও খালবিল ও টিউবওয়েলের খাবার পানিও হয়ে পড়ে লবণাক্ত। দেখা দেয় খাবার পানির সংকট।
জানা গেছে, জলোচ্ছ্বাসে জোয়ার ভাটায় কিছুটা পরিবর্তন দেখা দেয়ায় লবণাক্ত পানি সমুদ্র পর্যন্ত যেতে পারছে না। ফলে এলাকার নদ নদী ও খালবিলের পানি হয়ে পড়েছে লবণাক্ত। এদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর লবণ পানি অবস্থান করায় কৃষিক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। যেমন মরছে গাছপালা তেমনি মারাত্মক উৎপাদন কমছে এ এলাকার অর্থকরী ফসল নারিকেল ও সুপারির। বাদ যাচ্ছে না ধান উৎপাদনেও।
পিরোজপুরের আলামকাঠির কৃষক হেমায়েত উদ্দিন বলেন, আমাদের বলেশ্বর নদীর পানি আগে মিষ্টি ছিল। আমরা নদীর দুপাড়ের চড়ে বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজির চাষাবাদ করতাম; যা এখন হয় না। কারণ নদীর পানি আগে মিষ্টি ছিল এখন লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, জেলার সর্বোত্র লবণপানি প্রবেশ করায় নদী নির্ভর পানির প্লান্টগুলোতে দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। অন্যদিকে টিউবওয়েলের খাবার পানিতেও দেখা দিয়েছে লবণাক্ততা। তাতে এ জেলার মানুষ আমাশয়সহ বিভিন্ন পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া নদী পুকুরের পানিতেও লবণাক্ততা থাকায় দেখা দিয়ে চর্মসহ বিভিন্ন রোগের।
শিকারপুর এলাকার বাবুল খান বলেন, আমাদের এলাকায় ডিপ টিউবওয়েল বসালে আগে সুপেয় পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এতেও প্রচুর পরিমাণে লবণাক্ততা। টিউবওলের পানি খাওয়ার উপযোগী আর নেই। লবণ পানির কারণে বিভিন্ন রকমের সমস্যায় ভুগছি আমরা।
জেলার মাটিতে লবণাক্ততার প্রভাব থাকলেও চিন্তিত না হয়ে লবণাক্তসহিষ্ণু ফসল চাষে উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। তা ছাড়া লবণাক্ততা রোধে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণের গুরুত্ব আরোপ করেছেন পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সিকদার।
পিরোজপুর জনস্বাস্থ্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল আলীম গাজী বলেন, জেলার পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়ায় আমরা বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করছি; এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেইন হার্ভেস্টিং ওয়াটার। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।
তিনি আরও বলেন, সবকিছুই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এ সমস্যা থেকে আমাদের বাঁচতে হলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে হবে।
লবণাক্ততা প্রবেশের ফলে জেলার প্রায় ৭ লাখ মানুষ রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। আর ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল রয়েছে ঝুঁকির মুখে।