তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, সুরক্ষা দেয়। আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। অন্যদিকে তার সরকারের বারংবার আবেদন সত্ত্বেও কিছু দেশ খুনিদের ফেরত না দিয়ে তাদের মানবাধিকার রক্ষা করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সামরিক স্বৈরশাসক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সারাদেশে বিভিন্ন কারাগারে ও ঢাকা সেনানিবাসের ফায়ারিং গ্রাউন্ডে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত কর্মকর্তা ও সৈন্যদের হত্যা করার পাশাপাশি অসংখ্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে গুম ও হত্যার সংস্কৃতির সূচনা করেছিল। নিহতদের স্বজনরা এখনো তাদের কাছের এবং প্রিয়জনের লাশ পায়নি উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিএনপি এখন কোন মুখে গুম-খুনের কথা বলছে।
প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং এই দিনে বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, যারা সেইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে ডাক্তার, সাংবাদিকসহ দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল সেই নিজামী থেকে শুরু করে যাদের আমরা বিচার করেছি এবং বিচারের রায়ও কার্যকর করেছি এদেরকেইতো খালেদা জিয়া ও জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় বসিয়েছিল। এদেরকেও মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়েছিল জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানানোর পর এরশাদ এসে আরো এক ধাপ ওপরে উপদেষ্টা অথবা প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যান্ডিডেটও বানালো, রাজনীতি করার সুযোগ দিল জাতির পিতার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিকে, সেই ফারুককে।
তিনি বলেন, জাতির পিতার খুনি রশিদ ও ডালিম এখনো পাকিস্তানে পলাতক, খুনি রশিদ যে আমার সেজো ফুপুর বাড়িতে গিয়ে ৪ বছরের সুকান্ত থেকে শুরু করে আমার ফুপুকে গুলি করেছে, ফুপাকেও হত্যা করেছে, তিনজন ফুপাতো বোনকে হত্যা করেছে, ভাইকে হত্যা করেছে, সে এখন আমেরিকায়। বার বার তাদের কাছে আমরা অনুরোধ করছি ঐ আসামিকে আমাদের কাছে ফেরত দেন, সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে তারা দেয় না। কারণ খুনির মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। অর্থ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর মানবাধিকার রক্ষা করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আর মেজর নূর যে সরাসরি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গিয়েছিল সেই নূর এখন কানাডায়। কানাডা সরকারকে বারবার অনুরোধ করি তারা ফেরত দেয় না। খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে তারা ব্যস্ত। তাহলে আমরা যারা আপনজন ও স্বজন হারিয়েছি তাদের অপরাধটা কি? সেটা আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করি। বিএনপি বা জামায়াত যারা এদের জন্য হা-পিত্যেশ করে কান্নাকাটি করে, তারা এর জবাব দিক।
তিনি বলেন, শুধু এখানে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। কত মানুষকে গুম করেছে। আমার ছাত্রলীগের মাহফুজ বাবুর লাশতো তার পরিবার পায়নি। নারায়ণগঞ্জের মনিরের লাশতো পায়নি। যুবলীগ নেতা চট্টগ্রামে মৌলভী সৈয়দকে দিনের পর দিন অত্যাচার করে মেরেছে, ঠিক সেইভাবে খসরুসহ আমাদের বহু নেতাকে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে। একেক জনকে অত্যাচার করে এমনভাবে ছেড়ে দিয়েছে বেশিদিন তারা আর বাঁচতে পারেনি।
তিনি বলেন, এই বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং আওয়ামী লীগকে একদম নিশ্চিহ্ন করার অপরাধ তারা করেছে। এদেশের স্বাধীনতা আমরা এনেছি। জাতির পিতা যদি স্বাধীনতা না আনতেন তাহলে ঐ মেজর জিয়া কি কোনোদিন মেজর জেনারেল হতে পারতো বা তার পরিবার সেই স্ট্যাটাস ভোগ করতে পারতো, পারতো না। ঐ মেজর থেকেই স্যালুট দিতে দিতে ঐ বুট ও পা ক্ষয় হয়ে শেষ হয়ে যেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। যারা আপনজন হারিয়েছে তারা জানে যে তারা কি হারিয়েছে। তারাও তো লাশ পায়নি। আর যারা পেয়েছে তাও গলিত লাশ, দেখার মতো নয়।
আলোচনা সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন।
আরো বক্তব্য দেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুর রহমান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক শহিদ জায়া ডা. রোকেয়া সুলতানা এবং মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভাটি সঞ্চালনা করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।