বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

যে বিদ্যালয় শিক্ষার অনুকরণীয় রোল মডেল 

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৪৭ বার পঠিত

প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তার ও শিশুদের মেধা বিকাশে মননশীল মানসম্মত শিক্ষায় অনুকরণীয় রোল মডেল ঝালকাঠির কির্ত্তিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশুবান্ধব প্রাকৃতিক ও শিখন পরিবেশে গড়ে ওঠা এ বিদ্যালয় শিক্ষা বিস্তারে অন্যন্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে।

‘আমার মেয়ে ভোরেই ঘুম থেকে ওঠে। নিজ ইচ্ছায় স্কুলের যাবার প্রস্তুতি নেয়। কখনো ছুটি চায় না। রোজই যাইতে চায়। কখনো বলতে হয় না যে স্কুলে যাও। হেডমাস্টার স্কুলের পরিবেশটা এমনভাবে সুন্দর করে তুলেছে। স্কুলিই যেন এখন ওদের খেলার ছলে শিক্ষা কেন্দ্র। স্কুলে শিশুসহ সব শ্রেণিতেই এ কারণে উপস্থিতির হার অনেক বেশি। ’

আকলিমা খাতুনের মেয়ে ফারিহা তাসনিম ঝালকাঠি সদর উপজেলার কির্ত্তিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপির নেতৃত্বে গত ১২ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে বিদ্যালয়ে। উল্লেখযোগ্য হারে জড়ে পড়া কমানোয় তার বিদ্যালয়টি বিভাগীয় পর্যায়েও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে।

জেলা শহরের অদূরে কির্ত্তিপাশা গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩শ।

জানা যায়, ২০১১ সালে প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপি এই বিদ্যালয়ে যোগ দেন। তখন বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিশু শিক্ষার্থীদের বসার মতো অনুকূল পরিবেশ ছিলো না। এখন সেই প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ হয়ে উঠেছে জেলার মধ্যে সেরা। বিদ্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই শিশুদের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি নৈতিকতা শিক্ষা দিতে করা হয়েছে সততা স্টোর। প্রতিটি ক্লাসে প্রস্তুত রাখা হয় খাতা ও কলমের। যার কলম নেই, সে নির্ধারিত স্থান থেকে কলম বা খাতা নিয়ে লিখে আবার রেখে যায়।

প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপি বলেন, ২০১১ সালে যোগদানের পর থেকে প্রথমশ্রেণিতে ভর্তি হওয়া সকল শিক্ষার্থীকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠচক্র সমাপ্ত করে বিদ্যালয়ের সুসংগঠিত কাবদল উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের ক্যাম্পুরিতে অংশ গ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার শতভাগ। প্রতিবছর ৬-৭ জন শিক্ষার্থী ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে আসছে। ২০১৬ সালে ৩ জন শিক্ষার্থী শাপলা কাব সম্মাননা অর্জন করে, ওই বছরই বরিশালে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে প্রতিবছরই পুরস্কৃত হচ্ছে এ বিদ্যালয়ের ক্ষুদে খেলোয়াররা। আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ। ঝরে পড়া রোধে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বৃদ্ধিতে বিশেষ পদ্ধতিতে মা সমাবেশ পালন। জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ। নিয়মিত মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, হোম ভিজিটের মাধ্যমে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ত্রৈমাসিক পুরস্কারের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের নিয়ে বার্ষিক বনভোজন ও শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা এবং মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষের কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণে আগ্রহী। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের ছবি ও তথ্যসমৃদ্ধ পাঠাগার। বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণে সুসজ্জিত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি কক্ষ। শিক্ষার্থীদের পরস্পর সহযোগিতা ভিত্তিক ‘বন্ধু সেবা’ কক্ষে রয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী।

তিনি আরো বলেন, আগে উপস্থিতির হার ছিল ৭০ শতাংশ। এ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আগে ঝরে পড়তো। এখন ঝরে পড়ার হার শূন্য। উপস্থিতি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঝরে পড়ার হার কমানোয় বরিশাল বিভাগে বিদ্যালয়টি শ্রেষ্ঠ হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা ছিল জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয়। ঝরে পড়া রোধ ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন তিনি। বিশেষ পদ্ধতি চালু করায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দময় হয়ে উঠেছে।

প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপি বলেন, ‘একটি বিদ্যালয়ের রূপকল্প প্রণয়নে একটি বাস্তবায়নযোগ্য স্বপ্নের দরকার। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য ভেতরে আগ্রহ থাকা দরকার। আমি গ্রামের এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হয়ে উঠতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন বলেন, প্রধান শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপি বিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

অভিভাবকরা জানান, এ বিদ্যালয়ে শিশুদের আকর্ষণের জন্য রয়েছে দোলনা, সরাৎ, ঢেকিকল, কেরাম, ফুটবল, বিভিন্ন গল্পের বই সহ বিভিন্ন উপাদান। রয়েছে যাদুঘর, ফুলের বাগান, হ্যান্ড ওয়াশ বøক, শহীদ মিনার, বিভিন্ন মানচিত্র, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, কার্যকরি একটি মহানুভবতার দেয়াল, শিক্ষা মূলক বিভিন্ন চার্ট, সমস্ত বিদ্যালয় জুড়ে বিভিন্ন মনিষীদের ছবি আর দেয়াল জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষনীয় বাণী। এ বিদ্যালয় রয়েছে রাসেল স্মৃতি পাঠাগার, যেখান থেকে শিশুরা শেখ রাসেল সম্পর্কে জানতে পারছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com