নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: বনানীতে যে ভবনে আগুন লেগেছিল নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে সেটি আরো আটতলা বাড়ানোর অভিযোগে ভবনটির মালিকসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সংস্থার উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুটি মামলায় ভবনের মালিক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলায় ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে ভবনটির ১৯ থেকে ২৩ তলা নির্মাণ, বন্ধক দেওয়া ও বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন ভবনটির মালিক এস এম এইচ আই ফারুক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান কে এ এম হারুন ও সদস্য মো. রেজাউল করিম তরফদার, ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল, কাসেম ড্রাইসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসভির-উল-ইসলাম, রাজউকের সাবেক পরিচালক মো. শামসুল আলম, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মো. মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী পরিচালক শাহ মো. সদরুল আলম, সাবেক প্রধান ইমারত পরিদর্শক মো. মাহবুব হোসেন সরকার, সাবেক ইমারত পরিদর্শক মো. আওরঙ্গজেব সিদ্দিকি, সহকারী অথরাইজড অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক জাহানারা বেগম, সহকারী পরিচালক মেহেদউজ্জামান, নিম্নমান সহকারী মুহাম্মদ মজিবুর রহমান মোল্লা, অফিস সহকারী মো. এনামুল হক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) সদস্য (অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী, সংসদ সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবদুল্লাহ আল বাকি, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ নাজমুল হুদা ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সামছুর রহমান।
অন্য মামলায় অভিযোগ করা হয়, ভবনটির ১৫ তলা পর্যন্ত অনুমোদন থাকলেও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-১৯৯৬ লঙ্ঘন করে নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। এই মামলায় আসামি করা হয়েছে পাঁচজনকে। তাঁরা হলেন ভবন মালিক ফারুক, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে মালিক মুকুল, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন খাদেম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইদুর রহমান ও সাবেক অথরাইজড অফিসার সৈয়দ মকবুল আহমেদ।
মামলায় বলা হয়, ভবনটির মালিক ফারুক ১৯৯৬ সালে তাঁর মালিকানাধীন ১০ কাঠা জমির ওপর ১৮ তলা ভবন নির্মাণের জন্য রাজউকে আবেদন করেন। প্রথমে ১৫ তলার অনুমোদন পেলেও রাজউকের সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে অবৈধভাবে ১৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০০৫ সালে আবার অবৈধভাবে ১৮ তলার ওপর আরো পাঁচতলা নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে তদন্তে অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে ভবনটি বাড়ানোর প্রমাণ পেয়েও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত অংশ বিক্রির অনুমোদন দিলে কাশেম ড্রাইসেলের মালিক তাসভির সেটি কেনেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ দুপুরে বনানীর ওই ভবনটিতে আগুন লাগে। এতে অন্তত ২৭ জন নিহত হন। ওই ঘটনার পর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাই শেষে মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়।