মহান আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি দর্শন, উপার্জন, জ্ঞান আহরণ, রোগ নিরাময় এবং আত্মশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। কেউ যদি সওয়াবের নিয়তে ভ্রমণ করে, পুরো ভ্রমণেই তার সওয়াব অর্জন হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য স্বামী-স্ত্রী সপরিবারে বা দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে বা পর্যটনে যাওয়ায় কল্যাণ ও পুণ্য নিহিত রয়েছে।
সফরের প্রতি ইসলাম কখনো নিরুৎসাহ করেনি। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে দেশ-বিদেশে ভ্রমণের প্রতি তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এক আয়াতে আল্লাহ বলেন- ‘বলো, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং দেখো, তোমাদের আগের লোকদের কী পরিণাম হয়েছিল! তাদের বেশিরভাগই ছিল মুশরিক।’ -(সুরা: রুম, আয়াত: ৪২)
অন্য সব বিষয়ের মতো ভ্রমণ সম্পর্কেও ইসলামের সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশনা আছে। তা মেলে চললে ভ্রমণও ইবাদতে পরিণত হতে পারে। নির্দেশনাগুলো হলো-
১. সফরের ক্ষেত্রে একেবারে প্রথম কাজটি হোক ইস্তিখারা। আপনার জন্য এ সফর কল্যাণকর হবে কি না জেনে ফেলুন ইস্তিখারার নামাজের মাধ্যমে। (ঘুমের আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নির্দিষ্ট দোয়া পড়ে ইস্তিখারা করা হয়)। জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সব ব্যাপারে ইস্তিখারা করতে শিখিয়েছেন, যেভাবে কোরআনের সুরা গুরুত্বের সঙ্গে শিখিয়েছেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৮৮৭)
২. সফরকালে নানা বিপদাপদের আশঙ্কা থাকে। সেজন্য যানবাহন, আসবাবপত্র ও যাত্রাপথ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব ভালো করে খোঁজখবর নিন।
৩. সফরের সিদ্ধান্ত হলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরকারী তার পরিবারের জন্য দুই রাকাত নামাজের চেয়ে ভালো কিছু রেখে যায় না। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, হাদিস: ৪৯১২)
৪. যতটা সম্ভব একাকী সফর পরিহার করুন। একাকী সফর নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। সুতরাং ভালো কাউকে সফরসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করুন। মহানবী (সা.) বলেছেন, সঙ্গীহীনতায় কত কী সমস্যা! আমি যেমন জানি, তোমরাও জানলে রাতে একাকী কখনো সফর করার সাহস পেতে না। (বুখারি, হাদিস: ২৯৯৮)
৫. অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে গ্রুপ লিডার নির্বাচন করুন। যিনি পরামর্শের ভিত্তিতে সফরের দায়িত্বগুলো সম্পন্ন করবেন। অন্যদের কাজ হবে তার নির্দেশনা মেনে চলা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সফরে তোমরা যদি তিনজন হও, একজনকে আমির নিযুক্ত করো। (আবু দাউদ, হাদিস: ২৬০৯)
৬. সাতসকালে যাত্রা করুন। সাহাবি সাখর আল গামিদি (রা.) ব্যবসায়ী ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বলেন, ‘ভোরবেলাকে আমার উম্মতের জন্য বরকতে পূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে।’ এরপর থেকে সাখর আল গামিদি (রা.) সকাল সকাল ব্যবসায় নেমে পড়তেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন। (ইবনু হিব্বান, হাদিস: ৪৭৫৪)
৭. পরিচিত ও প্রিয়জনদের থেকে সুন্দরভাবে বিদায় নিন। বিদায় দানকারী বলবেন, আল্লাহ তোমাকে তাকওয়া-পরহেজগারি দান করুন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করুন আর যেখানেই থাকো তোমাকে তিনি কল্যাণ দিন। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৪৪) আর সফরকারী বলবেন, আল্লাহর নিরাপত্তায় তোমাকে অর্পণ করছি, তিনি অনন্য আস্থাভাজন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৯২১৯)
৮. সফরের জিকির এবং দোয়াগুলো পড়ুন। গাড়িতে উঠে পড়বেন, ‘সুবহানাল্লাজি সাখখরা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন।’ অর্থাৎ ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি এটিকে আমাদের আয়ত্তাধীন করেছেন, অথচ আমরা একে নিজেরা আয়ত্তাধীন করতে পারতাম না।’
আর সফর শেষে পড়বেন, ‘আ-ইবুনা, তা-ইবুনা, আবিদুনা, লি রাব্বিনা হামিদুন।’ অর্থাৎ ‘আমরা ফিরে এসেছি, পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, আনুগত্যের প্রত্যয় নিয়ে এবং আল্লাহর প্রশংসায় মুখর হয়ে।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৩৪২)
৯. সফর শেষে প্রথমে নিজ এলাকার মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। (বুখারি, হাদিস: ২৬)