প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন বৈশ্বিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সরকার আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে শ্রমঘন শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে চায়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষনা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি ও বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের গবেষণা সব সময়ই চলছে। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা খুবই সীমিত। এক শ্রেণির চিকিৎসক এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসা চর্চা ও গবেষণা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরি অথবা রাজনীতিতে চলে যান। আরেক শ্রেণি শুধু টাকা কামাতে ব্যস্ত। তারা একই সঙ্গে সরকারি চাকরি ও প্রাইভেটে প্র্যাকটিস করেন। সেখানে আর গবেষণা হয় না। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এসেছে। আমাদের প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। সেজন্য দক্ষ জনশক্তি দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দিচ্ছি। দক্ষ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশ-বিদেশে গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য এমএস, এমফিল, পিএইডডি উত্তর প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ দিচ্ছি। ২০১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৮২ জনকে প্রায় ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে। এই ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০১ জন গবেষককে প্রায় ১৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার বৃত্তি বা অনুদান দেওয়া হয়েছে। পাশপাশি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেও ফেলোশিপ-বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা উন্নয়ন কাজে উৎসাহ প্রদানে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে বিশেষ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ২০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫২১টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এই গবেষণা বা ফেলোশিপের জন্য অনুদান পেয়েছেন তারা আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন।
সরকার প্রধান বলেন, বিজ্ঞান ও গবেষণা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণাই সাফল্য এনে দিতে পারে। গবেষণার কারণে আমরা আমিষ ও খাদ্য উৎপাদনে সফল হয়েছি। ’৯৬ সালে সরকারে এসেই দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ করেছি। পরবর্তী বাজেটে তা ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু তাই নয়, সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, বায়ো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং নভো থিয়েটার করেছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিভাগীয় শহরেও সরকার নভো থিয়েটার করে দিচ্ছে। দেশে শুধু একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। সরকার আরো কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন বিভাগীয় শহরগুলোতেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। রুপকল্প-২০০১ বাস্তায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে থেমে থাকলে হবে না। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম। আমরা কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়বো না। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।