শনিবার তখন বিকেল। ওই সময় সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ছয় জন নিহত হয়েছেন। দগ্ধ ১৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে অংশ নেয় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব ও পুলিশ। রোববার সকাল থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।
সীমা অক্সিজেন অক্সিকো প্ল্যান্টের মার্কেটিং সুপারভাইজার মো. মোস্তফা বলেন, ‘আমি আছরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলাম। নামাজ চলা অবস্থায় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। দ্রুত মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখি আমাদের অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এরপর আরো কয়েকটি বিস্ফোরণ হয়। দুই-তিন মিনিটের মধ্যে সব তছনছ হয়ে গেছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, অক্সিজেন প্ল্যান্টটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার অক্সিজেন সিলিন্ডার। বিস্ফোরণের মাত্রা এতই তীব্র ছিল যে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে উড়ে যাওয়া প্ল্যান্টের লোহার টুকরার আঘাতে আশপাশের বেশ কয়েকটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি থাকা অনেক ভবন ও স্থাপনার কাচ ভেঙে গেছে। প্ল্যান্টটির জানালার গ্লাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গ্রিলগুলো বাকা হয়ে গেছে। প্ল্যান্টটির সামনে অবস্থিত পেনিনসুলা স্টিল মিলের ১৮টি এসি নষ্ট হয়ে গেছে।
সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সুপারভাইজার ছানা উল্ল্যাহ বলেন, প্ল্যান্টটিতে প্রতিদিন ২০০-২৫০ বোতল অক্সিজেন রিফিল করা হতো। ‘প্রতি বোতলে ৯.৪ ঘনমিটার অক্সিজেন থাকে। প্ল্যান্টটিতে আড়াই থেকে তিন হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন মজুত ছিল। চীন থেকে কেমিক্যাল এনে প্রক্রিয়াজাত করে সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা হতো।
তিনি আরো বলেন, প্ল্যান্টটিতে তিন শিফটে কাজ চলতো। প্রতি শিপটে ১৬ জন কাজ করেন। দুপুরের শিফটে ১৬ জন কাজ করলেও চার জনকে মৃত অবস্থায় ও সাত জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বাকি পাঁচ জনের এখনো খোঁজ পাইনি আমরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের সামনে অবস্থিত পেনিনসুলা স্টিল মিলের ইলেকট্রিশিয়ান বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এর স্থায়িত্ব ছিল তিন-চার মিনিট। তবে আমাদের কারখানা বন্ধ থাকায় কোনো শ্রমিক ছিলেন না।’
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ অবস্থায় সাত জনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আগ্রাবাদ, সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ৯টি ইউনিট কাজ করেছে। তবে আগুন কীভাবে লেগেছে, তা এখনো জানা যায়নি। তদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। রোববার সকাল থেকে পুনরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।