বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

বৃষ্টির পানিতে ভাসছে তরমুজ, কৃষকের সর্বনাশ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩
  • ১০০ বার পঠিত

দুদিনের টানা বৃষ্টিতে বরগুনার নিচু এলাকার ফসলের মাঠে জমেছে পানি। ক্ষেত তলিয়ে পানিতে ভেসে নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার তরমুজ। নতুন করে মেঘের গর্জন কৃষকের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। কষ্টের ফসলের এমন দশায় নির্বাক কৃষকরা।

সরেজমিনে বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী এলাকায় তরমুজ ক্ষেত ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ৩০ হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষেত থেকে ১১ সেচ মেশিন দিয়ে পানি অপসারণ করছেন কৃষকরা। কেউ কেউ আবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করে তরমুজ গাছ বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অনেকে তরমুজ ক্ষেতের নালা থেকে পানি অপসারণের কাজ করছেন।

এ সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে অবাক দৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে আছেন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কৃষক আবু হানিফ (৫০)। এনজিও থেকে চড়া সুদে চার লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিন হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত দু দিনের বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে ভাসছে তরমুজ। কষ্টের ফসলের এমন দশায় নির্বাক হয়ে পড়েছেন তিনি। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন গত তিন মাস ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সোনার ফসলের দিকে।

শুধু হানিফ নন, একই অবস্থা বরগুনার শত শত কৃষকের। এ অবস্থায় লাভতো দূরের কথা, এনজিওর ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।

বরগুনা জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ১৫ হাজার ৮৩৮ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়। যা থেকে তরমুজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় প্রায় সাত লাখ মেট্রিকটন। যার বাজারমূল্য ধরা হয় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা।

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এই এলাকার কৃষক আবু হানিফ বলেন, চার হেক্টর জমিতে চার লাখ টাকা খরচ করে তরমুজ আবাদ করেছি। প্রায় সব টাকাই এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছি। এরমধ্যে কিছু টাকা আছে ধার করা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রায় ১০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু গত দুই দিনের বৃষ্টিতে তরমুজ ক্ষেতে হাঁটু সমান পানি হয়ে গেছে। গাছসহ সব তরমুজ পানিতে তলিয়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

বাহাদুর নামের আরেক তরমুজ চাষি বলেন, সেচ মেশিন দিয়ে পানি অপসারণ শুরু করেছি। কিন্তু প্রায় ২০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পানি অপসারণ করতে পারিনি। এ অবস্থায় একটি তরমুজও টিকবে না। গাছও সব মরে যাবে।

সালেহ নামের আরেক কৃষক বলেন, এ বছর তরমুজের ভালো ফলন হয়েছিল।‌ আর ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযুক্ত হতো। আমরা একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। লাভ তো দূরের কথা এখন ঋণ পরিশোধ করবো কি দিয়ে সেই চিন্তায়ই বাঁচি না।

সোবাহান মৃধা নামের আরেক কৃষক বলেন, একদিকে মেশিন দিয়ে পানি অপসারণ করছি অন্যদিকে আকাশে কালো মেঘের গর্জন। মেঘের গর্জন আমাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে।

সালেক নামের আরেক কৃষক বলেন, তরমুজ ক্ষেতের যেসব স্থান থেকে বেশি পানি নামাতে পেরেছি; সেই সব স্থানের গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে শুরু করেছি।

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা কৃষকদের কাছে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। দ্রুত সময়ে তরমুজ ক্ষেত থেকে পানি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছি আমরা। এ ছাড়াও গাছে ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। আমরা তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে ক্ষেতের অবস্থা অনুযায়ী কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

এ বিষয়ে বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম বলেন, কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যেই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে গিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছেন। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সহায়তা প্রদানের আশ্বাসও দেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com