‘সিডরের মতোই ঘূর্ণিঝড় মোখা শক্তিশালী। তবে সিডর দেশের মাঝ বরাবর দিয়ে গিয়েছিল। আর মোখা পাশ দিয়ে যাচ্ছে। উপকূলে যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মোখা গতি সঞ্চার করতে থাকবে। প্রায় সিডরের সমতুল্য গতিবেগ নিয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে মোখা।’
শনিবার আবহাওয়া অধিদফতরের মিডিয়া সেন্টারে ঘূর্ণিঝড় মোখা নিয়ে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক মো. আসাদুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, উখিয়া অঞ্চলে মোখার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। এটি যখন তীরে আছড়ে পড়বে, তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৬০ কিলোমিটারের বেশি। এর প্রভাবে যে বৃষ্টি হবে, তাতে পাহাড় ধসের শঙ্কা আছে। একটানা আট ঘণ্টার বেশি প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে। প্রবল বৃষ্টির হতে পারে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে। ঢাকায় তুলনামূলক বৃষ্টি কম হবে।’
আসাদুর রহমান বলেন, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টির ডায়ামিটার ৫০০ থেকে ৫৫০ কিলোমিটার। ডায়ামিটার যদি ২৫০ কিলোমিটারও থাকে, তাও তো কম না। তীর থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে এলে এর গতি থাকবে ১৬০-১৭৫ কিলোমিটার। কিন্তু, এটা আরো গতি সঞ্চার করতে পারে। এ গতিতে এগিয়ে এলে কাল সকাল ১০টা থেকে ঝড়ো হাওয়ার পরিমাণ বাড়বে।
দক্ষিণ উপকূল এলাকা দিয়ে এগিয়ে আসছে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এর পরিপ্রেক্ষিতে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। মহাবিপদ সংকেতের পাশাপাশি তিন বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আজ দুপুরে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল ঘূর্ণিঝড়টি।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
সামুদ্রিক ঝড়গুলোর শক্তির বিচারে সর্বোচ্চ ধাপে রয়েছে ‘সুপার সাইক্লোন’। যখন কোনো ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার ছাড়ায়, তখনই তাকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়। এ পর্যন্ত যত তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার ছাড়াতে পারে। সুপার সাইক্লোন না হলেও এর ধ্বংস ক্ষমতা কম হবে, এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই বলে সতর্ক করছেন আবহাওয়াবিদরা।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। অবকাঠামোসহ হাজার হাজার প্রাণহানির কারণ হয় এ প্রাকৃতিক দুর্যোগটি।