জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশের সময় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নিজের ভয়ানক অসুস্থতার কথা সংসদে বর্ণনা করলেন ।
নিজের সুস্থ হওয়ার গতি অনেক শ্লথ জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিন সংসদ শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি সম্পূর্ণভাব ব্ল্যাঙ্ক ছিল। আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না।
শনিবার ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
এ সময় তার কণ্ঠস্বর দুর্বল ছিল। বক্তব্য শুরুর পরই স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে অনুমতি চান বসে বক্তব্য দেয়ার। স্পিকার অনুমতি দিলে বসে বক্তব্য শুরু করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১৩ জুন প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করি। কিন্তু সেই দিনটি ছিল আমার জীবনের চরম কষ্টের দিন। কারণ এর তিনদিন আগে অর্থাৎ ১০ জুন ডেঙ্গু জ্বরে ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং হাসপাতালে ভর্তি হই। এ অসুস্থতা নিয়েই আমি গত ১৩ জুন সংসদে আসি। আমার বিশ্বাস ছিল, আমি প্রস্তাবিত বাজেটটি উত্থাপন করতে পারব। কিন্তু আমি যা ভেবেছিলাম বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সংসদ শুরুর আগে যখন সংসদে প্রবেশ করি তখন থেকে পরবর্তী ৭-৮ মিনিট আমি সম্পূর্ণভাবে ব্ল্যাঙ্ক ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমার কোনো কিছুই মনে পড়ে না। আমি কোনো রকমে গিয়ে আমার আসনে বসলাম। তখন আমার কেবল মনে হচ্ছিল প্রবল এক ভূমিকম্প পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে। সেই ভূমিকম্পের কারণেই যেন ক্ষণে ক্ষণে আমার কম্পন হচ্ছিল। আমার মনে হচ্ছিল আমি সিট থেকে পড়ে যাচ্ছি। আমি তখন মনে মনে দোয়া পড়তে শুরু করলাম। মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ সৃষ্টির জন্য। আমি ভাবতে শুরু করলাম আমার আশপাশের বন্ধুবান্ধব কেউ না কেউ ধরবেন, যেন আমি ছিটকে না পরে আহত না হই। অতি অল্পসময়ের মধ্যেই আমার বন্ধু-বান্ধব সব ছুটে আসলেন।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে আমি স্বাভাবিক হই। মনে হলো আমার আর সমস্যা হবে না। আমি তখনই ২৫-৩০ মিনিটের মতো প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু অংশ পড়লাম। তখন আরেকটি নতুন সমস্যা দেখা দিল। সেই সমস্যাটি হলো আমার হাতে কোনো শক্তি নেই। আঙুলে কোনো শক্তি নেই। বাজেটের পাতাগুলো উল্টাতে পারছিলাম না। তখন সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী এগিয়ে এলেন। তিনি আমার বাজেটের প্রতিটি পাতা উল্টে দিলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটাও রইল না। একটু পরই আমি চোখে কিছু দেখি না। তখন আর সময় না নিয়ে আমি স্পিকারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিকভাবে অনুরোধ করি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও অসুস্থ ছিলেন। তারপরও আন্তরিকভাবে ও সুন্দরভাবে বাজেটটি পড়লেন।
প্রধানমন্ত্রীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১৩ তারিখ থেকে অসুস্থতার কারণে আমার আদৌ বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। এমনকি সংসদেও আসতে পারিনি। আমি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ নই। ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছি। যদিও গতি অনেক শ্লথ। তবে সংসদে আমি না থাকলেও আমার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংসদে থেকে এমপিদের কথা নোট নিয়েছেন ও প্রতিদিন আমাকে অবহিত করেছেন।