বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

জীবন সংগ্রামে অন্ধ রফিকুলের একমাত্র ভরসা বাঁশি

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১০৭ বার পঠিত

শরীয়তপুরের কানার বাজার ও পালং বাজারের বিভিন্ন জায়গায় বিকেল হলেই বাঁশির সুরে অনেক পথচারী একবার হলেও থমকে যায়। হাটুরিয়ারা কেনাকাটা শেষে ঘুরে ঘুরে এসে দাঁড়ায় বাঁশুরির সামনে। কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে শোনে, তারপর ঘরের বাচ্চাদের জন্য লজেন্স নিয়ে যায়। এই লজেন্স বিক্রি করেন ৭১ বছর বয়সী রফিকুল ইসলাম। যিনি দু’চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন শৈশবে। তারপরও ভিক্ষাবৃত্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
রফিকুল ইসলামের বাড়ি শরীয়তপুরের পালং থানার ভুচূড়া গ্রামে। এ লজেন্স বিক্রির সামান্য আয় দিয়েই চলে তার সংসার।

রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৫২ সালের দিকে দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। তার বয়স যখন চার বছর তখন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। গরিব বাবার পক্ষে চিকিৎসা করানো সম্ভব না হওয়ায় হারাতে হয়েছে দুচোখ। তবে হেরে যাননি তিনি। ১০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। ভিক্ষাবৃত্তিকে ভীষণভাবে অপছন্দ করায় শুরু করেন কাজের সন্ধান। এরপর তিনি রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় বাসে আর ট্রেনে ঘুরে ঘুরে লজেন্স বিক্রি করতে থাকেন।

১৯৭৩ সালে লজেন্স বিক্রির কোনো একসময় পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার কাছ থেকেই রপ্ত করেন বাঁশি বাজানো। এরপর বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করেন। যা এখন পর্যন্ত ধরে আছেন।

তার সংসার জীবনে স্ত্রী রোকেয়া বেগম, দুই ছেলে আব্দুর রহিম ও সোহাগ মুন্সি রয়েছেন। যদিও ছেলেরা বিয়ের পরে তাদের সংসার নিয়ে আলাদা থাকছেন।

তিনি আরো বলেন, চার বছর বয়স থেকে টাইফয়েড জ্বরের কারণে আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সেই থেকেই আমার দুঃখের জীবন। আমি শুনেছি ভিক্ষা করা আল্লাহ পছন্দ করে না। তাই নিজে নিজেই কাজের সন্ধান করে ঢাকায় বাসে, ট্রেনে লজেন্স বিক্রি করা শুরু করি। আমি এখন পর্যন্ত কারও কাছ থেকে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পাইনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এভাবেই সংগ্রাম করে যাবো।

স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা বোরহান উদ্দীন মুন্সি বলেন, তিনি খুব ছোটবেলা থেকে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করেন। তিনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষা করেন না। এভাবেই তার সংসার চলছে।

বাবুল সরদার নামের আরেকজন বলেন, রফিকুল ইসলাম ভিক্ষা না করে নিজে নিজের কর্ম করে খান। এটা আমাদের এলাকাবাসীর কাছে একটি গর্বের বিষয়।

স্কুলশিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, তাকে আমরা খুব ছোটবেলা থেকেই চিনি। উনি চোখে দেখতে পান না। এ অবস্থায় তিনি বিভিন্ন গ্রামে, হাট-বাজারে বাঁশি বাজিয়ে লজেন্স বিক্রি করেন। উনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও কারও ওপর নির্ভরশীল না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেই সংসার চালাচ্ছেন। এটা আমাদের সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, রফিকুল ইসলামের কথা আমি অনেক শুনেছি। তিনি দারুণ বাঁশি বাজান। জানতে পেরেছি তিনি খুবই দরিদ্র। এ বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন করা হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com