উত্তরা সংবাদ দাতা :
কর্তৃপক্ষের দেওয়া কয়েকদফা প্রতিশ্রুতি ও অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে ও হলো না শেষ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও অদক্ষতার কারণে বছরের পর বছর ঝুলে আছে উত্তরা বিমানবন্দর মহাসড়ক বিএনএস সেন্টারের সামনের মুল সড়কের ফুটওভার ব্রিজের উন্নয়ন কাজ। এমনটা জানিয়েছেন উত্তরা এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এলাকায় পথচারীদের চলাচলে সুবিধার্থে সড়কে ফুটওভার ব্রিজ স্থাপন করেছেন। এ কাজের দায়িত্বে রয়েছে সড়কও জনপদ এবং সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২০৫ ফিট লম্বা এবং ১৫ ফিট চওড়া স্টীলের তৈরী ফুটওভার ব্রিজের স্ট্রাকচার পিলারে উঠলেও দীর্ঘ দুই মাসেও এটি এ পর্যন্ত পথচারীদের চলাচলের উপযোগী হয়ে উঠেনি।
গত মার্চ মাসে “পিলারেই সন্তুষ্ট সিটি কর্পোরেশন” শিরোনাম সংবাদ প্রকাশের পর তরিগরি করে কর্তৃপক্ষ স্ট্রাকচারটি পিলারে স্থাপন করেন। নান্দনিক এ ব্রিজটির রয়েছে ৩টি অংশ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় এ ব্রিজটির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছেন মাইসা কনস্ট্রাকশন কোম্পানী। প্রায় পাঁচ মাস যাবৎ পিলারের উপর ব্রীজের স্ট্রাকচারটি ঝুলে আছে কেন?কত দিনের মধ্যে মানুষ চলাচল করতে পারবে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। বেশীর ভাগ কাজ শেষ, শুধুমাত্র ব্রীজের উপরের ছাউনি লাগানো বাকী রয়েছে। এ-তো সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজের বিভিন্ন প্রসিডিওর রয়েছে,ব্রিজ এবং সিঁড়ি ডালাই শেষ করে ২১ দিন পর রেলিং লাগালো হয়েছে। এভাবে একটা শেষ করে আরেকটার কাজ শুরু করতে হয়েছে। ছাউনী ও রং শেষ করে এটিকে এ মাসের মধ্যেই পথচারীদের জন্য উম্মুক্ত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা প্রতিদিন কাজের অগ্রগতি তদারকি করছে। ব্রিজের দুই পাশে সিঁড়ি লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন ফিটিংস সংযুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি এক মাসের মধ্যে সকল ফিটিংস ব্রিজে সংযুক্ত হয়ে যাবে এবং চলাচলের উপযোগী হবে।
এ বিষয়ে মাইসা কনস্ট্রাকশন কোম্পানীর ইন্জিনিয়ার মেহেদী হাসান বলেন, ফুটওভার ব্রিজের ৮০ ভাগ কাজ শেষ। এ কাজে তাদের কোন গাফিলতি নাই। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এটিকে তারা চলাচলের উপযোগী করে তুলবেন।
এই ফুটওভার ব্রিজ নিয়ে জনস্বার্থে গত ২ মাস যাবত সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ, প্রকল্প পরিচালক,সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে কয়েক ধাপে বিভিন্ন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর ১০ই জুন শনিবার ভোর রাতে কর্তৃপক্ষ ব্রিজের ডেক স্লাব উত্তোলন করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পিলারে স্থাপন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই ফুটওভার ব্রিজটি চালু হলে এই এলাকার লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে,এরি সাথে সড়ক দূর্ঘটনা,প্রাণহানী ও জনদূর্ভোগ কমবে।
গত ০৮/০৬/২০২৩ বৃহস্পতিবার রাত ১২ টা হইতে ভোর ৬ টা ও ১০/০৬/২০২৩ ইং শনিবার উত্তরা বিএনএস সেন্টার সংলগ্ন বিমানবন্দর মহাসড়কের নির্মাণাধীন ফুট ওভারব্রিজের ডেক স্লাব উত্তোলন করা হয়।
পথচারীরা জানান,প্রায় দেড় বছর রাস্তা দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিল পিলার, পূণরায় কাজ শুরু হয়ে ও তিন মাস যাবৎ এটি ঝুলে আছে। তারা আরে বলেন, এ প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মাইসা কনস্ট্রাকশন কোম্পানী একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান। তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে। প্রতিদিন হাজার হাজার স্কুল, কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ পথচারীরা এখানকার ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে আশা যাওয়া করতো! প্রায় দুই বছর যাবৎ জীবনে ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে রাস্তা পারাপার হতে হয়। স্থানীয় লোকজন, পথচারী ও ক্ষুদ্রব্যবসায়ীরা বলেন, এ এলাকাটি বর্তমানে মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এক দিকে গণপরিবহনের চাপ অপর দিকে টঙ্গী থেকে উড়ালসড়ক হয়ে আসা গাড়ির চাপে এলাকাটি বিপদজনক হয় উঠেছে।
এবিষয়ে,ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইন্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপ- সহকারী প্রকৌশলী মমিনু জানান, অল্প কিছু দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। ইতি মধ্যে ব্রিজের উঠা নামার জন্য দুইটি সিঁড়ি লাগানো হয়েছে। ব্রিজের ভিতর বাহিরের অনান্য প্রয়োজনীয় যন্রাংশ সেট করা হয়েছে,এটিকে ত্রুটিমুক্ত করে চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এদিকে উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে
গুরুত্বপূর্ণ এই ফুটওভার ব্রিজটি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় এখানকার হাজার হাজার পথচারী,কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ উত্তরা এলাকার ব্যবসায়ীরা নানান ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বিএনএস সেন্টার দশ তলা ভবনের ব্যবসায়ীরা জানান, দীর্ঘ দিন যাবত এখানকার ফুট ওভার ব্রিজটি সচল না থাকায় মার্কেটে লোকজন আসতে পারে না,এর ফলে প্রতিমাসে তাদেরকে লোকসান গুণতে হচ্ছে। উত্তরার বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী ও অভিভাবকেরা জানান,কর্তৃপক্ষ তাদের এবং বাচ্চাদের জীবন নিয়ে খেলা করছেন।অভিবাবকেরা বাচ্চাদের নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কের মাঝখানে যানবাহনের সামনেই দৌড়ে দৌড়ে রাস্তা পারাপার হন। ফুটওভার ব্রিজের কার্যক্রম দেখে তারা খুশি হয়েছিল, কিন্তু কাজের ধীর গতি দেখে তারা হতবাক। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোঃ সেলিম বলেন, ছয় মাস যাবৎ রাস্তার পাশে পড়ে ছিল ফুটওভার ব্রিজের দুটি অংশবিশেষ।গত জুন মাসে সেটিকে পিলারে স্থাপন হয়েছে। কাজের গতি এতোটাই স্লো ভাবাই যায় না,তার ধারণা ঠিকাদারের কারণেই দীর্ঘদিন যাবৎ পথচারীদের এই ভোগান্তি।
তিনি আরো বলেন, উত্তরা বিমানবন্দর মহাসড়ক বিএনএস সেন্টারের সামনে পিলারের উপর দাড়িয়ে থাকা মুল সড়কের মাঝ রাস্তায় ফুটওভার ব্রিজের স্ট্রাকচার উঠতে দেখে স্থানীয় দোকানদার,বিভিন্ন পেশাজীবি,ব্যবসায়ী সমাজ, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে আনন্দের ছাঁপ দেখা গিয়েছিল। তাদের দাবি বড় কোন ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আগেই যেন খুব দ্রুত সময়ে ফুট ওভারব্রীজটি চলাচলের উপযোগী করে উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়।